‘এমন কেউ কি আছেন আমাকে সহযোগিতা করতে পারেন’

আঠারো বছর আগে বাংলাদেশের নিয়নকানুন মেনে অন্যদের মতো লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটার তালিকায় ছবি তুলেছিলেন আজহার উদ্দিন (৩৮) । তবে সেসময় তাকে লেমিনেটিংযুক্ত একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয় কাজের সুবিধার্থে। পরে উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সরকার।
অনেকেই পুরনো জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড পেলেও আজহার উদ্দিন এখনো স্মার্ট কার্ড পাইনি। জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিজেকে স্মার্ট করতে প্রায় দিনই ঠাকুরগাঁ জেলা নির্বাচন অফিসের বারান্দায় ঘুরঘুর করছেন তিনি। কার্ড প্রিন্ট হয়নি বা স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট হয়ে আসেনি এমন কথা বলে নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা ফিরিয়ে দিচ্ছেন আজহার উদ্দিনকে।
আজহার উদ্দিনের বাড়ি সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের হরিনারায়নপুর এলাকায়। তিনি জেলা শহরের ড্রিমল্যান্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বর্তমানে একটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।
একাধিকবার নির্বাচন অফিসে ঘুরেও তার স্মার্ট কার্ড না পেয়ে রাগে-ক্ষোভে নিরুপায় হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) স্মার্ট কার্ড খোঁজের একটি পোস্ট করেন। তিনি তার পোস্টে লিখেন, একটি কার্ডের জন্য আত্মচিৎকার। গতকাল (মঙ্গলবার) আমি জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়, ঠাকুরগাঁও গিয়েছিলাম। আমার স্মাট অইডি কার্ডের খোঁজ নিতে। help desk এ বলা হলো আমার আইডি কার্ড এখনো আসেনি। পরে তার কাছে জানতে চাইলাম কি করতে হবে। তিনি জানালেন আসলে জানতে পারবেন, পরে আমি আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম কার সাথে কথা বলতে পারি। উত্তরে জানালেন পাশের রুমে যান।
পাশের রুমে আমার সমস্যার কথা বলাতে তিনি চেক করে জানালেন আমার আইডি প্রিন্ট হয়নি কোনো এক অজানা কারণে। আমি কি করতে পারি বলাতে, তিনি বলেন এখন প্রিন্ট কার্যকম বন্ধ। চালু হলে পাবেন। আর খুব বেশি প্রয়োজন হলে ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। আমার বন্ধু আমার সাথে ছিল তারও একই সমস্যা। কয়েক দিন আগে শুনলাম দুদক একজনের কার্ড ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমার প্রশ্ন আমি কার কাছে গেলে কার্ডটি পাবো। ঠাকুরগাঁওয়ের মধ্যে এমন কেউ কি আছেন আমাকে এ-ই বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। সহযোগিতা করলে আপনার জন্য দোয়া করবো। যা এরইমধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মো. আজহার উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, আমার সময়ে যারা ভোটার হয়েছিল তারা সবাই স্মার্ট কার্ড হাতে পেয়েছে শুধুমাত্র আমি বাদে। বেশ কয়েকবার জেলা নির্বাচন অফিসে গেছি কার্ডের সন্ধানে কিন্তু অফিসের লোকজন প্রতিবারে একটি কথা বলে আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। ৫ বছর আগেও বলেছিল কার্ড প্রিন্ট হয়ে আসেনি আর ৫ বছর পরেও একই কথা। কথায় গেলে কার্ডটা পাব? কে শুনবে আমার একটি কার্ডের আত্মচিৎকার?
তিনি আরও বলেন, শুধু আমি নই, শোভন মোস্তাফা নামে আমার এক বন্ধুও একই সমস্যায় পড়েছে। তাকেও অফিসের লোকজন ঘুরাচ্ছে। কার্ডটি কবে নাগাদ আসবে তার একটা সঠিক সময় বললে আমাদের হয়রানি হতো না। তারা এ রুম থেকে ও রুম ঘুরাচ্ছে। আমরা আর পাছি না। এখন আবার বলছে স্মার্ট কার্ডের ডিজিটাল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এর আগে, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, কাজে হয়রানি, কার্ড প্রদানে ভোগান্তিসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযান চালানো হয় দুদকের সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজীর নেতৃত্বে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই সময় কয়েকজন ভুক্তভোগী দুদক কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। এছাড়া সময় মতো ভোটার কার্ড প্রদান না করে অর্থের লোভে মাসের পর মাস হয়রানি করা হয় ভোটাদের। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে ভুক্তভোগীরা কাজের জন্য এসে চরম ভোগান্তির শিকার হন। সব কিছু শোনার পর দুদকের কর্মকর্তারা ঘুষ গ্রহণের সাথে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত সেই বিষয়ে তদন্তে নামেন।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মঞ্জুরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক ভোটারের স্মার্ট কার্ড এখনো আসেনি। আমরা আমাদের সেবা অব্যাহত রেখেছি। কাউকে হয়রানি করার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিনে অনেক অভিযোগ সমস্যা নিয়ে অফিসে আসে। আমরা দ্রুত সমাধানের জন্য ঢাকায় পাঠাই। সেখান থেকে আসতে দেরি হচ্ছে। তবে যারা স্মার্ট এখনো পাইনি তাদের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
আর দুদকের সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী বলেন, কিছুদিন আগে কয়েকজনের অভিযোগ পেয়ে জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছিল। কিছু সমস্যার সমাধানও দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যদি কেউ অভিযোগ করে আমাদের কাছে তাহলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
রেদওয়ান মিলন/এমএএস