রামগঞ্জ ট্র্যাজেডি, ১২ বছর পর কবর খুঁড়ে মরদেহ উত্তোলন

নীলফামারী সদরের রামগঞ্জে ১২ বছর আগে সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত জামায়াত কর্মী আবু বকর সিদ্দিকের মরদেহ অবশেষে কবর খুঁড়ে উত্তোলন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে আদালতের নির্দেশে এই কার্যক্রম পরিচালনা করে পুলিশ ও সিআইডির ফরেনসিক টিম।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়। এ ঘটনার জেরে দেশজুড়ে শুরু হয় সহিংসতা। ১৪ ডিসেম্বর বিকেলে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা নীলফামারী সদর আসনের সংসদ এবং তৎকালীন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। হামলার পরপরই রামগঞ্জ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। ওই দিনই সংঘর্ষে প্রাণ হারান জামায়াত কর্মী আবু বকর সিদ্দিকসহ পাঁচজন।
তবে নিহত আবু বকরের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, এটি কোনো সংঘর্ষে মৃত্যু নয়, তাকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে ও পরে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। তৎকালীন প্রশাসন ঘটনাটিকে ‘সংঘর্ষে প্রাণহানি’ হিসেবে উল্লেখ করেছিল। ঘটনার পর একটি হত্যা মামলা হলেও বছরের পর বছর তদন্তে অগ্রগতি হয়নি। একপর্যায়ে মামলাটি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর আবু বকরের ছেলে লিটন রহমান নীলফামারী আমলি আদালতে ২০২ জনকে আসামি করে নতুন করে হত্যা মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের স্বার্থে কবর খুঁড়ে মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।
কবর খনন ও নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানজীর ইসলাম, নীলফামারী থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সজীব সাহা, নিহতের ছেলে লিটন রহমান এবং সদর উপজেলা জামায়াতের আমির আবু হানিফা শাহ।
মরদেহের হাড় ও অন্যান্য নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে। পুলিশ বলছে, ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে এলে মামলার তদন্তে নতুন গতি আসবে।
নিহতের ছেলে লিটন রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এই ঘটনার মূলহোতা ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আমি দীর্ঘদিন ধরে বিচার চাইছি। কবর খোঁড়ার মাধ্যমে নতুন করে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হলো। দ্রুত সব আসামিকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
প্রসঙ্গত, এই হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে এবং ঘটনাটি নতুন করে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
শরিফুল ইসলাম/এমএএস