বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানিতে ধস : সংকটে ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও পরিবহন খাত

বাংলাদেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হঠাৎ করে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। পণ্যে আমদানি নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ট্রাক চলাচলের সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি কমেছে প্রায় ৭৪ হাজার টন এবং রপ্তানি কমেছে ৩৬ হাজার টনের বেশি। ফলে এ বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা, শ্রমিক ও পরিবহন খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানি ছিল ২১ লাখ ৩০ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন, যা এখন দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫৬ হাজার ২৮১ মেট্রিক টনে। এক অর্থবছরে আমদানি কমেছে ৭৩ হাজার ৯৪৭ মেট্রিকটন। আবার একই অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭২ টন। যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৭৫০.১৪ মেট্রিক টনে। রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ৩৫ হাজার ৯২১.৮৬ মেট্রিক টন।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন যেখানে আগে বন্দর দিয়ে গড়ে ৬০০ ট্রাক পণ্য আসত, এখন তা নেমে এসেছে ৫০০-এর নিচে। রপ্তানিমুখি ট্রাকও কমেছে।
বন্দরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানিকৃত পণ্যবাহী মোট ট্রাকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৪৩০টি এবং রপ্তানিমুখি ট্রাক ছিল ৪৭ হাজার ৩০৯টি। বিশেষ করে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বাণিজ্যে বড় ধস নেমেছে। জুন ২০২৫ মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১ লাখ ৪ হাজার ৬৭৫ মেট্রিক টন। যা জুলাইতে এসে দাঁড়িয়েছে লাখের নিচে এবং রপ্তানি আরও কমে হয়েছে ২০ হাজার ৩৫১ দশমিক ১৮ মেট্রিক টন।

এ পথে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি পণ্যের মধ্যে ছিল— শিল্প কারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, গার্মেন্টস, শিশু খাদ্য, মাছ, কেমিক্যাল, মোটরপার্টস, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর মধ্যে উচ্চশুল্ক আরোপকৃত পণ্যের আমদানি কমে গেছে। অপরদিকে রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল পাট, পাটের তৈরি পণ্য, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, বসুন্ধরা টিস্যু, মেলামাইন, মাছ উল্লেখযোগ্য। কিন্তু ভারত সরকারের বিধিনিষেধের কারণে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে তা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন জানান, এ বন্দর দিয়েই ভারত-বাংলাদেশের সিংহভাগ বাণিজ্য চলে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ট্রাক চলাচল হ্রাস পেয়েছে। সরকার কিছু পণ্যে আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ব্যবসা কমেছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে শ্রমিক, পরিবহন খাত এবং সরকারের রাজস্ব আয়ে। এখনই বিধিনিষেধ শিথিল না করলে ক্ষতি আরও বাড়বে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক মো. শামীম হোসেন জানান, সরকার যেসব পণ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার অধিকাংশ দেশে উৎপাদিত হয়। ফলে সেগুলোর আমদানি বন্ধ হওয়ায় ট্রাফিক এবং কার্গো দুটোই কমেছে।
বন্দরের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও আমদানি বিধিনিষেধ শিথিল না করলে বেনাপোল বন্দরের বাণিজ্য আরও তলানিতে পৌঁছাবে। এ অবস্থায় সরকার ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এ সংকট কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রেজওয়ান বাপ্পী/এমজে