কারমাইকেল কলেজে দেখা মিললো বিশাল অজগরের

‘অ-তে অজগরটি আসছে তেড়ে’- বইয়ে পড়া সেই অজগরের দেখা মিললো কারমাইকেল কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে। মুহূর্তেই সেখানে ভিড় করেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। রোববার (১০ আগস্ট) সাপটির প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়াসহ শিক্ষার্থীদের জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আহত অজগরটিকে কলেজ ক্যাম্পাসে নিয়ে যান ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট লিজেন আহম্মেদ প্রান্ত।
এর আগের শুক্রবার (৮ আগস্ট) কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকিরের চর এলাকা থেকে অজগরটিকে উদ্ধার করেন ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশ-এর স্থানীয় প্রতিনিধি।
প্রায় ১৪ কেজি ওজনের বারো ফুট লম্বা অজগরটির মাথায় আঘাত, মুখে গভীর ক্ষত এমনকি দাঁত পর্যন্ত ভেঙে গেছে স্থানীয়দের পিটুনিতে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওইদিন রাতেই রংপুরে আনা হয় সাপটিকে। রংপুর চিড়িয়াখানার জু অফিসার ডা. এইচ এম শাহাদাত জরুরি ভিত্তিতে অজগরটির চিকিৎসা দেন।
ওই চিকিৎসকের চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী সাপটির ক্ষত ড্রেসিং ও ওষুধ প্রয়োগ করতে রোববার নেওয়া হয় কারমাইকেল কলেজের উন্মুক্ত পরিবেশে। সেখানে সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট লিজেন আহম্মেদ প্রান্ত যেন তার নিবিড় হাতের ছোঁয়া আর এক ফোঁটা ওষুধে সাপটিকে সুস্থ করে তোলার আশায় পরিচর্যা করেন। কিছুটা সুস্থ হলে অজগরটিকে হস্তান্তর করা হবে বন বিভাগের কাছে। আর যখন পুরোপুরি সেরে উঠবে, তখন ফিরিয়ে দেওয়া হবে নিজের স্বাভাবিক আবাসে।
জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের স্থানীয় জেলে আমজাদ আলী ব্রহ্মপুত্র নদে শুক্রবার মাছ ধরার সময় তার নিষিদ্ধ চায়না ডারকি জালে আটকে পড়ে বিশাল আকৃতির অজগর সাপটি। বিষয়টি জানার পর বনবিভাগের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত অবস্থায় সাপটি উদ্ধার করেন।
আমজাদ আলী জানান, নদীতে মাছ ধরার ফাঁদ পাতানো জাল তুলতে গিয়ে দেখতে পান একটি অজগর মাছের লোভে জালের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। প্রায় ১৪ কেজি ওজনের সাপটি উদ্ধার করে তিনি বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ভিড় জমায় সাপটি একনজর দেখতে। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা তার কাছ থেকে সাপটি উদ্ধার করেন।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা ফজলুল হক বলেন, সাপটি আঘাতপ্রাপ্ত। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে রংপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। সেখানে সাপটিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিজেন আহম্মেদ প্রান্ত জানান, তার সংগঠন দেশজুড়ে সাপসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী উদ্ধার, চিকিৎসা এবং অবমুক্তির কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে রেখে যাচ্ছে অনন্য অবদান।
তিনি আরও জানান, উদ্ধার হওয়া সাপটি বার্মিজ পাইথন একটি নির্বিষ এবং বিপন্ন প্রজাতির সাপ। এরা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না, বরং আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেকেই ভয় বা ভুল ধারণার কারণে এ ধরনের সাপকে মেরে ফেলে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর