পুলাডা কইলো বন্ধুদের সঙ্গে ইন্ডিয়া ঘুরতে যাইতাছি, আর ফিরল না

আমার পুলাডার সঙ্গে শেষ কথা হয় ৭ তারিখে। খালি কইলো আম্মা, আমি ইন্ডিয়া ঘুরবার যাইতাছি বন্ধুদের সঙ্গে এরপর আর কিছুই জানি না। আজ সকালে খবর পাইলাম আমার পুলা নাই— কথা গুলো বলছিলেন ভারতীয় জনতার গণপিটুনিতে নিহত আকরাম হোসেনের মা ফুনে আরা বেগম।
অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ, সেখানকার বাড়িঘরে হামলা ও অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে ভারতীয় জনতার গণপিটুনিতে নিহত হন বাংলাদেশি যুবক আকরাম হোসেন (৩২)।
সোমবার (১১ আগস্ট) বিকেলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার খনজয় কৈথাকোণা গ্রামের একটি বনাঞ্চলে তাকে আটক করে গণপিটুনি দেওয়া হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে ভারতীয় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে পুলিশ মহেশখোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত আকরাম শেরপুর ঝিনাইগাতীর বাঁকাকুড়া গ্রামের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় প্রাইভেটকার চালক। পরিবার জানায়, তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় থাকতেন না; স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বরিশালের রুপাতলী এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম ও সীমান্তসূত্র জানায়, ৯ আগস্ট রাতে আকরামসহ আটজন বাংলাদেশি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে মেঘালয়ে প্রবেশ করেন। দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার রোংদাংগাই গ্রামে গিয়ে তারা বাড়িঘরে হামলা ও এক বাসিন্দাকে অপহরণের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা পাঁচজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তাদের কাছ থেকে একটি রিভলভার, তিনটি ওয়্যারলেস সেট ও পরিচয়পত্র জব্দের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আটক হওয়া অন্যরা হলেন — জামালপুরের মারুফুর রহমান (৩২), জাহাঙ্গীর আলম (২৫), নারায়ণগঞ্জের সায়েম হোসেন (৩০), কুমিল্লার মেহফুজ রহমান (৩৫) ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মোবারক হোসেন (৩২)। তাদের কাছ থেকে একটি রিভলভার, তিনটি ওয়্যারলেস সেট, একটি ম্যাগাজিন ও পরিচয়পত্র জব্দের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
শেরপুরের বাঁকাকুড়া এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য মুসা মিয়া বলেন, আকরাম দীর্ঘদিন এলাকায় নিয়মিত থাকতেন না। তিনি কার সঙ্গে বা কীভাবে ভারতে গিয়েছেন এ বিষয়ে স্বজনদেরও কোনো ধারণা নেই। মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বজনরা লাশ ফেরত আনার জন্য স্থানীয় বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
নিহতের বড় ভাই ও পান-ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আকরামের মৃত্যুর খবর পাই। কীভাবে সে ভারতে গেল, সেটা জানি না।
স্ত্রী বন্যা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৬ আগস্ট সে বলেছিল বন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ভারতে ঘুরতে যাবে। পরে একদিন ফোন দিয়ে বলল— আমি খুব ঝামেলায় আছি, ঝামেলা মিটে গেলে ফোন দেব। ৫০ সেকেন্ড কথা হয়েছিল; এরপর আর খোঁজ নেই। এখন আমার বড় ছেলে ৭, মেজ ৪, ছোট মেয়ে ১ এদেরকে দেখবে?
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আকরামের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও শেরপুরে একাধিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
সীমান্তে লাশ ফেরত আনার বিষয়ে ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন (৩৯ বিজিবি)–এর আওতাধীন নকশী বিওপির সুবেদার আব্দুল লতিফ জানান, বিএসএফের সঙ্গে লাশ ফেরত আনার বিষয়ে যোগাযোগ চলছে।
নাইমুর রহমান তালুকদার/এআইএস