ফরিদপুরের পানিবন্দি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৬০ পরিবার পেল খাদ্য সহায়তা

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর তীরে গড়ে ওঠা ‘স্বপ্ননগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত ২৬০ পানিবন্দি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
গত এক সপ্তাহ ধরে ওই এলাকার অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে বৃদ্ধ মানুষ, শিশু ও গৃহপালিত পশুরা।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিকেল আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের স্বপ্ননগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে ক্ষতিগ্রস্ত ২৬০ পরিবারকে ১৫ কেজি করে মোট ৪ টন চাল বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হাসান সাকেত, উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. মতিয়ার রহমান ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বিল্লাল মোল্যা প্রমুখ।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৩ একর জমির ওপর ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে পদ্মা নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হয় টিনশেড ওয়ালবিশিষ্ট ২৬০টি ঘর। ওই সময় এলাকাটিকে ‘স্বপ্ননগর আবাসন’ নামকরণ করে জেলা প্রশাসন। যাদের জমি নেই, ঘর নেই—এমন অসহায় পরিবারগুলোকে ঠাঁই দেওয়া হয় ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তবে সরকার ঘোষিত উপহারের এই ঘরগুলো মধুমতির তীরবর্তী এলাকায় গড়ে ওঠায় গত ৮-১০ দিন ধরে মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্প স্বপ্ননগর এলাকা প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েন সেখানে বসবাসরত ২৬০ পরিবার। পরে সেখানে ৪ টন চাল ও নদীভাঙন ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর মেরামতের জন্য নগদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসন। তবে সোমবার বিকেল থেকে স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় পানি কমতে থাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চরকাতলাসুর এলাকায় ‘স্বপ্ননগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রবেশপথে কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও তার চেয়ে বেশি। সারি সারি ঘরগুলোর প্রতিটি গলিতেও পানি প্রায় হাঁটু সমান। অধিকাংশ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে নোংরা পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে রান্নার চুলা ও টয়লেটের রিং-স্ল্যাব। শিক্ষার্থীরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিরাপদ পানির অভাব ও নোংরা-দুর্গন্ধযুক্ত পানির সংস্পর্শে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। একই সঙ্গে সাপের উপদ্রবও দেখা দিয়েছে। সেখানকার দিনমজুর, পশুপালন, ভ্যানচালনা, কৃষিকাজ ও টাইলসের কাজ করা মানুষজন জীবিকা নির্বাহে সমস্যায় পড়েছেন। প্লাবিত ঘরগুলোয় বসবাসকারীরা খাবারের অভাবে হাহাকার করছে।
চাল পাওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জোবেদা বেগম বলেন, মধুমতি নদীতে সাতবার বাড়ি ভেঙেছে। পরে সরকার এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে থাকার জন্য একটা ঘর দিয়েছে। কিন্তু এখানেও চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে, ঘরের মধ্যে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। তিন বেলার জায়গায় এক বেলা খাচ্ছিলাম। আজ পানি কমেছে, আর সরকারি চাল পাওয়ায় মনে স্বস্তি ফিরেছে।
বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়া শাহানা বেগম (৭০) বলেন, ঘরের ভেতর পানি। গরু-বাছুর বাঁচাতে পারি নাই, কামাই না হলে কী খাই বলো মনি? খাটের ওপর বসে থাকতে হচ্ছে। আজ চাল পেয়েছি, আবার পানিও কমেছে। এখন মোটামুটি চলতে পারব।
সরকারি চাল পাওয়া স্বপ্ননগরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) বলেন,পানিতে সব জায়গা তলিয়ে গিয়েছিল। যা চাষ করেছিলাম সব নষ্ট হয়ে গেছে। আজ টিএনও স্যার ১৫ কেজি চাল দিয়েছেন, কোনোভাবে খাওয়া-দাওয়া চলবে।
চাল বিতরণ শেষে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, মধুমতি নদীতে পানির বৃদ্ধির কারণে ‘স্বপ্ননগর’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সেখানে হাঁটু সমান পানি জমে যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ হিসেবে ৪ টন চাল ও নগদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসন। সেখান থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৬০ পরিবারকে ১৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তবে এলাকায় পানি কমতে শুরু করায় এখন বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
জহির হোসেন/আরকে