রাজবাড়ীতে ৮ বছরেও শেষ হয়নি মহাসড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণকাজ

রাজবাড়ীতে ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ২০১৭ সালে। দীর্ঘ ৮ বছর পার হলেও ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে অর্ধেক। নির্মাণকাজের অনেক স্থানেই বসানো হয়নি স্লাব। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
ড্রেন দিয়ে পানি প্রবাহিত না হওয়ার কারণে রাস্তায় যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। তেমনি মহাসড়কের স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে জরিমানা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যাদেশ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আঞ্চলিক মহাসড়কের পানিসহ শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য এই ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জেলা শহরের শ্রীপুর বাস টার্মিনাল থেকে চরলক্ষ্মীপুর আহম্মদ আলী মৃধা কলেজ পর্যন্ত চার কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। সাথে যোগ করা হয় দুপাশে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ। ড্রেনটির প্রাক্কলিত মূল্য ধরা হয় ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যৌথভাবে এই কাজের দায়িত্ব পায় স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন ও রানা বিল্ডারস প্রাইভেট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি লিমিটেড। ২০১৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৬ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পাঁচ বার মেয়াদ বাড়ানোর পরেও দীর্ঘ ৮ বছরে ড্রেনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৫৬ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পাদন করতে না পারায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জারিমানাসহ কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এবং কাজটি টার্মিনেট করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্রেন নির্মাণের ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার মধ্যে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে।
সরেজমিনে শহরের শ্রীপুর এলাকায় বাস টার্মিনাল এলাকায় দেখা যায়, ড্রেনের ভেতরে পানি থাকার কথা থাকলেও তা ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভর্তি রয়েছে। সড়কে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি ড্রেনে প্রবাহিত হচ্ছে না। কামালদিয়া ব্রিজ থেকে শহরের কামনা বিল্ডিং পর্যন্ত শহরের উভয় পাশেই ড্রেনের কাজ হয়েছে। কিন্তু কামনা বিল্ডিং থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ড্রেনের কাজ হয়নি। স্টেডিয়াম থেকে জেলখানা পর্যন্ত কিছু কিছু অংশে ড্রেনের কাজ হলেও কোথাও কোথাও স্লাব বসানো হয়নি। জেলখানা সামনে বেশিরভাগ স্থানে ড্রেনের স্লাব নেই। লতা পাতায় বিভিন্নস্থান ছেয়ে গেছে। বিভিন্ন দোকানগুলোর সামনে নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ ও কাঠের মাচা তৈরি করে ড্রেন পার হচ্ছে। ড্রেনের অনেক জায়গায় লোহার রড বের হয়ে আছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, এই প্রকল্প আওয়ামী লীগের সময় নেওয়া হয়েছিল। এটি একটি ভুল প্রকল্প ছিল। ড্রেনের পানি কোথায় যাবে সেই পরিকল্পনা তখন থেকেই করা হয়নি। খাতা কলমে সড়কের অর্ধেক কাজ শেষ দেখিয়েছেন কর্মকর্তারা। বাস্তবে কাজ হয়েছে অনেক কম। প্রকল্পের কাজের নামে লুটপাট করেছে সংশ্লিষ্টরা। এগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
শহরের জেলখানা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, আমরা ড্রেনের বিষয় নিয়ে সড়ক বিভাগে গিয়ে অভিযোগ করি। তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।মাঝে মাঝেই ড্রেনের ভেতর পথচারীরা পড়ে আহত হয়। ড্রেনের যেটুক কাজ হয়েছে তার ওপর স্লাব দেওয়া উচিত।
রাজবাড়ীর নাগরিক কমিটির সভাপতি জ্যোতি শঙ্কর ঝন্টু বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সেখানে কিছু কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। ড্রেনের অবকাঠামো অকেজো হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে প্রতিদিন নাগরিক ভোগান্তি বাড়ছে। রাষ্ট্রের কোটি টাকা অপচয়ে যেসব কর্মকর্তারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। আমরা ধারণা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ড্রেনটি রাজবাড়ীর ব্যর্থ প্রকল্পের দৃষ্টন্ত হয়ে থাকেব।
রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজস খান বলেন, ড্রেন নির্মাণ কাজ শুরু হবার সময় আমি রাজবাড়ীতে ছিলাম না। আমি ২০২৪ সালে এখানে যোগদান করেছি। এসে জানতে পারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাসহ কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ড্রেনের কাজ এখনো শেষ হয়নি কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে চিঠি দিয়েছি। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারব।
মীর সামসুজ্জামান/আরকে