ঠাকুরগাঁও সীমান্ত এলাকায় বিজিবির কড়া নজরদারি, কমেছে হত্যা ও চোরাচালান

আগের তুলনায় অনেকটা বদলে গেছে ঠাকুরগাঁও সীমান্তের দৃশ্যপট। এক সময় যেখানে সীমান্ত হত্যা আর চোরাচালান ছিল নিত্যদিনের ঘটনা, এখন সেখানে শান্ত পরিবেশ বিরাজ করে। সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি মাদক পাচার ও চোরাচালানের ঘটনাও হ্রাস পেয়েছে। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের পেছনে রাত-দিন এক করে কাজ করছে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এক সময় আতঙ্কে ঘেরা সীমান্ত এখন ধীরে ধীরে নিরাপদ অঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। সচেতনতা কার্যক্রম এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা মিলিয়ে এখন নতুন এক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।
বিজিবির তথ্য মতে, গত আট বছরে ঠাকুরগাঁও সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৩০ জন বাংলাদেশি নাগরিক। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৩ সালে সীমান্তে ৪ জন নিহত হলেও, ২০২৪ সালে এ সংখ্যা নেমে আসে দুইয়ে। চলতি বছরের ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত সীমান্তে নিহতের সংখ্যা একজন।
শুধু সীমান্ত হত্যা নয়, চোরাচালান ও মাদক পাচারও কমেছে অনেকটাই। সীমান্তের মানুষ বলছেন, বিজিবির নিয়মিত টহল, গ্রামে গ্রামে মাইকিং, মসজিদে প্রচারণা এবং স্থানীয়দের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের কারণেই এই পরিবর্তন এসেছে। অপরাধীদের দমন করার পাশাপাশি বিজিবি মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের কাউন্সিলিং ও পুনর্বাসনের উদ্যোগও নিয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তের বাসিন্দা রুবেল ইসলাম বলেন, এক সময় গরু আনতে গিয়ে কিংবা জমিতে কাজ করতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটত। এখন পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। বিজিবি সবসময় পাশে আছে। আমরা আগের মতো ভয় পাই না।
রত্নাই সীমান্তের স্থানীয় কৃষক ইলিয়াস আলী বলেন, আমাদের এলাকার যুবকেরা আগে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ত। এখন বিজিবির প্রচারণা ও কড়া নজরদারির কারণে তারা সচেতন হচ্ছে। অনেকে নতুন করে কাজকর্ম শুরু করেছে।
একজন সাবেক মাদক কারবারি আনোয়ার (ছদ্মনাম) বলেন, আগে আমি মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কিন্তু বিজিবির কাউন্সিলিং ও তৎপরতার কারণে আমি এই পেশা থেকে বের হয়ে এসেছি। এখন আর ওই পথে নেই। বিজিবি আমাকে সহযোগিতা করেছে সঠিক পথে ফিরে আসতে। এখন অনেক ভালো আছি।
বিজিবির সদস্যরা বলছেন, অপরাধ কমাতে হলে শুধু বাহিনীর তৎপরতা নয়, দরকার জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা। বিজিবির এক সদস্য জানান, আমরা শুধু অপরাধীদের দমন করি না, তাদের বোঝাই, পরিবারকে পাশে নিয়ে আসি। এতে করে অনেকে পেশা পরিবর্তন করছে। সীমান্তে এখন যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, এর পেছনে জনগণের সহযোগিতাও সমানভাবে কাজ করছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজীর আহম্মদ বলেন, চোরাচালান এবং সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা অপরাধ যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা বদ্ধপরিকর।
রেদওয়ান মিলন/আরকে