হল সংস্কারের দাবিতে রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের বাইতুল আমান শাখার তিনতলা বিশিষ্ট কবি নজরুল আবাসিক হল দীর্ঘদিন ধরেই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ছাদের কংক্রিট খসে পড়ছে, রড বেরিয়ে এসেছে, বৃষ্টির সময় হলঘরে পানি পড়ে। দরজা-জানালা ভাঙা, কলাম ও বিমে ফাটল। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য হলটিতে বসবাস অত্যন্ত অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। আজ বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা এ মানববন্ধনে অংশ নেন। কবি নজরুল হলের অনার্স ও মাস্টার্সের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে কর্মসূচিতে সংহতি জানায় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ শাখা ছাত্রদলের একাংশ।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে হল সংস্কারের জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও, সেই টাকা আবাসিক হলে ব্যয় না করে কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম তার সরকারি বাসভবনের সংস্কারে ব্যবহার করেছেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা প্রতিদিন জীবনঝুঁকি নিয়ে হলে থাকি। ছাদ থেকে খসে পড়া টুকরো মাথায় লাগছে। অথচ সরকার টাকা দিলেও আমাদের হল সংস্কার না করে অধ্যক্ষ সাহেব নিজের বাসভবন মেরামত করেছেন। এটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহিম বলেন, হলের অবস্থা এখন ভাঙা ঘরের মতো। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সংস্কারের কাজ শুরু না হলে আমরা আন্দোলনে নামব। প্রয়োজনে অধ্যক্ষের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এম মামুন রহমান বলেন, ছাত্ররা জরাজীর্ণ হলে থাকে আর অধ্যক্ষ সরকারি টাকায় আরাম করে নিজের বাসা মেরামত করেন। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। অবিলম্বে সংস্কার শুরু করতে হবে, নইলে ছাত্ররা কঠোর আন্দোলনে যাবে।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম বলেন, হলের ২য় তলার একটি কক্ষে ছাদের কংক্রিট খসে পড়েছে, রড বেরিয়ে আছে। ৩য় তলার সব কক্ষে বৃষ্টির সময় পানি পড়ে, অনেক জায়গার রঙ উঠে গেছে। চিলেকোঠার ছাদের রডও বেরিয়ে গেছে। কলাম ও বিম ফেটে গেছে, দরজা-জানালা ব্যবহারের অনুপযোগী। পাশ দিয়ে ট্রেন চলার সময় ভবন কাঁপে। অর্থের সীমাবদ্ধতার কারণে পুরোপুরি সংস্কার সম্ভব হয়নি। এই অর্থ বছরে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে কলেজের অডিটোরিয়াম ও আমার বাসভবনসহ কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৬৮ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। সেই টাকা প্রকৌশলীদের মতামত নিয়ে ব্যয় করা হচ্ছে এবং প্রতিটি টাকার হিসাব আমার কাছে রয়েছে।
ফরিদপুর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন, আমাদের পরিদর্শনে দেখা গেছে, ভবনের ৩য় তলার সম্পূর্ণ ছাদ ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। নিচতলার ডাইনিং ও কিচেন রুমের ছাদও ভেঙে নতুন করে দিতে হবে। সব কলাম, ফুটিং ও বিম রেট্রোফিটিং করতে হবে। বৈদ্যুতিক সংযোগ প্রতিস্থাপন, দরজা-জানালা ও নিরাপত্তা গ্রিল নতুন করে স্থাপন করতে হবে। এটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল কাজ। ১০ আগস্ট পুরোনো ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করার প্রস্তাব দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণের সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহিম অধ্যক্ষের বক্তব্য নাকচ করে বলেন, আমাদের হলকে পরিত্যক্ত ঘোষণার পাঁয়তারা চলছে। এটা হলে ছাত্র সমাজ রুখে দাঁড়াবে। আমরা অনতিবিলম্বে সংস্কার চাই।
জহির হোসেন/এআরবি