উন্নয়ন কাজে ধীরগতি, জনজীবনে দুর্গতি

কর্মক্ষেত্র হিসেবে রাজধানীর পাশের জেলা গাজীপুর থাকে পছন্দের শীর্ষে। জেলাটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গার কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে থাকে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে ২০১২ সালে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত দেশে প্রথমবারের মতো বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
প্রকল্পটিতে কয়েক দফা সময় বাড়ানোর সঙ্গে বেড়েছে ব্যয়। বিকল্প সড়কের ব্যবস্থা না করে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ওপর উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ায় প্রতিদিনই টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত চলে আসছে অসহনীয় যানজট। এতে ঢাকামুখী ও উত্তরাঞ্চলগামী কয়েক লাখ যাত্রীর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এতে যেমন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা তেমনি চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত মহাসড়কের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজট রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সকাল ৬টায় উত্তরার বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থল জয়দেবপুরের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। তিনি প্রতিদিনই উত্তরার ১৪ নং সেক্টর থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায় এসে অফিস করেন। সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি বোর্ড এলাকা পর্যন্ত এসেছেন। তিনি বলেন, উত্তরা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা ১২ কিলোমিটার সড়ক পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। প্রতিদিনই সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
যানজটের ভোগান্তিকে সঙ্গী করে প্রতিদিনই কর্মস্থলে যান জাহিদুল হক সুমন। তিনি জানান, বাড়ি থেকে বাসযোগে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় যান। তারপর বাস থেকে নেমে মহাসড়ক বাদ দিয়ে ভেঙে ভেঙে আঞ্চলিক সড়ক ধরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে উত্তরার কর্মস্থলে পৌঁছান।
তিনি আরও জানান, শুকনো মৌসুমে মহাসড়কে ধুলোবালির রাজত্ব করে। আর বর্ষার সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বড় বড় খানাখন্দে মহাসড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

রাজেন্দ্রপুর এলাকার একটি কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আনিসুল হক জানান, কারখানার গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র স্বাক্ষর করাতে প্রতিদিনই গুলশানের অফিসে পাঠানো হয়। কিন্তু যানজটের কারণে সময়মতো কাগজপত্র স্বাক্ষর করাতে পারছেন না। এতে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
অপর একটি কারখানার উৎপাদন কর্মকতা নুরুল হক জানান, কারখানার উৎপাদিত পণ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যানজটের কারণে। এতে কারখানা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
গাজীপুরের সাগর ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির স্বত্বাধিকারী নাজমুল হাসান জানান, কারখানার উৎপাদিত পণ্য টঙ্গী, আশুলিয়া গুলিস্তানসহ ঢাকার বিাভন্ন স্থানে আগে অল্প ভাড়ায় গাড়ি দেওয়া যেত। জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত মহাসড়কের অংশটুকু ভাঙাচোরা। এই ১২কিলোমিটার সড়ক পার হতে অনেক সময় রাত শেষ হয়ে যায়। তাই অনেক চালক ঢাকায় ভাড়া নিয়ে যেতে চায় না। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও গাড়ি না পাওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে।এখানে হাইলাইট অংশ টুকু দিন (এই লেখা ফেলে দিন আগে )
কাঁঠাল ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, সদর ও শ্রীপুর উপজেলার কৃষক পর্যায় থেকে ১০০/১৫০ পিস কাঁঠাল নিয়ে প্রতিদিনই ঢাকার খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি। বর্তমানে মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চলাচলই করা যাচ্ছে না। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও ট্রাক-পিকআপ মিলছে না।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন বলেন, মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত সড়কের বেশিরভাগ অংশই খানাখন্দে ভরপুর। তবে টঙ্গী থেকে গাজীপুর এই চার কিলোমিটার অংশে বেশি যানজট রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের আন্তঃসমন্বয় সভায় ছবি ও ভিডিও উপস্থাপন করেছি। মহাসড়কে খানাখন্দ কমিয়ে যানবাহনে স্বাভাবিক গতি ফিরলেই যানজট কমবে।
তিনি আরও বলেন, ট্রাফিক বিভাগে এমনিতেই জনবল কম থাকে। স্বল্প জনবলে যানজট নিরসনে বেগ পেতে হচ্ছে। তাই অন্যান্য ফাঁড়ি ও রিজার্ভ পুলিশ সদস্যদের এনে যানজট নিরসনে যুক্ত করা হচ্ছে। মহাসড়কে খানাখন্দ থাকায় তাতে তেমন কোনো ফলও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিআরটি প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ্ বলেন, উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মহাসড়কের যাত্রীদের। মহাসড়কের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক সমাধান করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই দুর্ভোগ লাঘব হবে।
শিহাব খান/এসপি