৮ বছর পর ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির সম্মেলন, মহাসচিবের দিকে তাকিয়ে নেতাকর্মীরা

দীর্ঘ আট বছর পর সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা বিএনপির দ্বি-বাষিক সম্মেলন। এই সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তবে প্রার্থী, কাউন্সিলর ও জেলার নেতৃবৃন্দরা তাকিয়ে আছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দিকেই।
দীর্ঘদিন পর হতে যাওয়া এই সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় সম্মেলন করতে না পারলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ ঘটা করে সম্মেলনের আয়োজন করেছে দলটি।
আট বছর পর বিএনপির সম্মেলন ঘিরে পুরো শহর সেজেছে নতুন নেতৃত্বে আসা নেতাদের ছবি, ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে। এই সম্মেলন ঘিরে ৮ বছর হামলা, মামলা, নির্যাতন ও কারাবরণে জর্জরিত নেতাকর্মীরা ফিরে পেয়েছেন প্রাণচাঞ্চল্য। এদিকে পুলিশ বলছে, সম্মেলন ঘিরে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্থরের নিরাপত্তা।

ইতোমধ্যে মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে টাঙানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। তবে প্রার্থী, কাউন্সিলর ও বিএনপির বিভিন্ন স্থরের নেতারা বলছেন, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তারা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। এ ছাড়া, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন করে দলকে পুনরুজ্জীবিত ও সুসংগঠিত করে আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করতে ভূমিকা রাখবে এমন নেতৃত্ব চান তারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৭ সালে জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত তৈমুর রহমান সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র ও মহাসচিবের ছোট ভাই মির্জা ফয়সল আমীনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। সেই কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর আর নতুন কোনো কমিটি হয়নি।
এবারে অভ্যুত্থানের পরে অনেকটাই আন্দন ও উৎসাহ নিয়েই প্রস্তুতি চলছে এই সম্মেলনের। সম্মেলনের ঘোষণা আসার পরই সরব হয়ে ওঠে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। পদপ্রত্যাশী নেতারা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

সোমবার ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নতুনভাবে দল পরিচালনার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। এ ছাড়া, সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য মতে, সম্মেলনে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৬ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। সবশেষ সভাপতি পদে রয়েছেন ১ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৪ জন প্রার্থী। এ ছাড়া, সম্মেলনে কাউন্সিলর রয়েছেন ৮০৮ জন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে বিএনপির নেতাকর্মীরা তৎপর হয়ে ওঠেন। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা ফিরতে শুরু করেন। কারাবন্দি নেতাকর্মীরা জামিনে মুক্ত হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরীফ ঢাকা পোস্টকে জানান, জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা চান নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক। সেই জায়গা থেকে তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন। তিনি আশা করছেন, কাউন্সিলররা দলের প্রতি প্রার্থীদের ত্যাগ-তিতিক্ষা বিবেচনা করে তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন।
আরও পড়ুন
আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপিকে একটি শক্তিশালী ইউনিটে পরিণত করেছি। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব কমিটি গণতান্ত্রিক উপায়ে গঠন করা হয়েছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং বিগত হাসিনার শাসনামলে জেল-জুলুমের ইতিহাস বিবেচনা করে আশা করি সম্মানিত কাউন্সিলররা আমাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করবেন।
সম্মেলনের নির্বাচন কমিশন অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্মেলন নিয়ে সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, একটি সুষ্ঠু সুন্দর সম্মেলন উপহার দিতে পাড়বো।
সম্মেলন ঘিরে নিরাপত্তার বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সম্মেলন ঘিরে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থরের নেওয়া হয়েছে ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও থাকবে আমাদের সঙ্গে।
রেদওয়ান মিলন/এএমকে