খাবার, স্যালাইন ও প্লাস্টার রুমে পদে পদে অনিয়ম

যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। রোগী ও স্বজনরা অভিযোগ করছিলেন, খাবার কম দেওয়া হয়, ওষুধ-স্যালাইন মজুত থাকলেও বাইরে থেকে কিনতে হয়, আবার প্লাস্টার রুমে রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর কার্যালয় থেকে অভিযান পরিচালনা করে হাসপাতালে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সহকারী পরিচালক (এডি) মোহাম্মদ আল-আমিন। উপস্থিত ছিলেন— হাসপাতালের আরএমও ডা. হাবিবা সিদ্দীকা ফোয়ারা, দুদকের ডিডি মোহাম্মদ তহিদুল ইসলাম ও চিরঞ্জীব নিয়োগীসহ আরও কর্মকর্তারা।
অভিযানে রান্নাঘরে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের তথ্য মেলে। এ ছাড়াও নির্ধারিত ২শ গ্রাম ভাতের পরিবর্তে কম ভাত, সকালের নাশতায় পাউরুটির পরিমাণ কম, ছোট ডিম সরবরাহ, নিম্নমানের লবণ, পেঁয়াজ-রসুন এবং চিকন চালের পরিবর্তে মোটা চাল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানতে পারে দুদক।
হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী সদরের চুড়ামকাটি গ্রামের ইনতাজ মন্ডল (৬৫) বলেন, সরকার আমাদের জন্য খাবার দেয়, কিন্তু এখানে তা ঠিকভাবে পাচ্ছি না। ভাত কম, ডিম ছোট, আবার তরকারি নিম্নমানের। অসুস্থ মানুষকে এমন খাবার দিলে কীভাবে সুস্থ হবো?
এদিকে, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে স্যালাইনের অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মেলে। অভিযানকালে দেখা যায় হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১৬০ পিস স্যালাইন থাকা সত্ত্বেও রোগীদের বাইরের দোকান থেকে কিনতে বলা হয়।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি শহরের খড়কি এলাকার রাজিয়া সুলতানার বোন তানিয়া সুলতানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি থেকেও আমাদের বাইরে থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। গরিব মানুষ, কষ্টে টাকা জোগাড় করি, অথচ সরকার সরবরাহ করলেও তা রোগীদের দেওয়া হয় না।
অভিযানকালে হাসপাতালের দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স দিলারা জামান বলেন, এটি ওপরের নির্দেশনা। আমরা ইচ্ছে করলে দিতে পারি না। পরে দুদক কর্মকর্তারা তাকে শোকজ করার নির্দেশ দেন।
অপরদিকে, অভিযানকালে প্লাস্টার রুমে ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি সামনে আসে। প্লাস্টার রুমে দেখা যায়, কাজ করছেন হাসপাতালের অনুমোদিত কর্মচারী নয় এমন লোকজন। তারা রোগীদের কাছ থেকে ১শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছেন। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তারা সেখানে ৫শ থেকে ১ হাজার টাকার চুক্তিতে মুসলমানি দিয়ে থাকেন। টাকা কম দিলে দুর্ব্যবহার করেন তারা।
ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার হাত ভাঙার পর প্লাস্টার করতে এসে দেখি বাইরের লোকজন করছে। তারা আগে থেকেই টাকা চাইলো। না দিলে কাজটা ঠিকমতো করবে না বলে হুমকি দিল। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে ১শ টাকা চুক্তিতে তারা হাতের প্লাস্টার করে দিয়েছে।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সদরের বোলপুর গ্রামের সেলিনা খানম বলেন, আমরা বহুদিন ধরে শুনে আসছি হাসপাতালে খাবার ও ওষুধের অনিয়ম হয়। রোববার দুদকের অভিযান দেখে মনে হচ্ছে এবার হয়তো পরিবর্তন আসবে।
দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল-আমিন বলেন, রোগীদের খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী এবং সেবার মান নিয়ে গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেছে। বিশেষ করে প্লাস্টার রুম ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডের অনিয়ম অগ্রহণযোগ্য। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হোসাইন শাফায়াত বলেন, দুদকের অভিযানে কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। আমরা বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোগীদের সেবার মান উন্নয়নে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
রেজওয়ান বাপ্পী/এনএফ