বারোমাসি কাটিমনের জাদুতে ভাঙছে আমের মৌসুমি সীমা

সারা বছর আম উৎপাদন হওয়ায় বদলে যাচ্ছে আমের মৌসুমি ধারণা। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন গৌরমতি, বারি-৪, রাবি-১১ ও কাটিমন জাতের আম মিলছে হাট-বাজারে প্রায় সবসময়ই। আমচাষ আর নির্দিষ্ট মৌসুমের অপেক্ষায় নেই। ফলে বাজারে আম পাওয়া যাচ্ছে বছরের বেশির ভাগ সময়।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর কিছু উপজেলায় এসব জাতের আম চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। বিশেষ করে কাটিমনের চাষ বেশি হচ্ছে। অন্য জেলাগুলোতে এখনো সীমিত আকারে হলেও চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, চাষ আরও বাড়াতে কাজ চলছে।
কানসাট আমবাজারে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) কাটিমন বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মণ দরে। গৌরমতি আমের দাম ৬ থেকে ৭ হাজার, আর আশ্বিনা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায়। নওগাঁয় বড় আকারের কাটিমন বিক্রি হচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। রাজশাহীতে খুচরায় কাটিমন মিলছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা মণ দরে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনাল, ভদ্রা মোড়, বিনোদপুর, সাহেববাজার ও শালবাগান এলাকায় ফলের দোকানে দেখা গেছে কাটিমনের পসরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ থেকে এই আম এনে বিক্রি করা হচ্ছে।
ক্রেতা রজব আলী বলেন, প্রচলিত আমের মৌসুম শেষ হলেও এখন বাজারে কাটিমন পাওয়া যাচ্ছে। দেখতে সুন্দর, আকারে বড় ও সুস্বাদু কাটিমন আম কেজিপ্রতি ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আরেক ক্রেতা সজিব ইসলাম বলেন, ভরা মৌসুমে আমের দাম ছিল ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। এখন তা বেড়ে ২৫০ টাকার ওপরে। সাধারণ মানুষ কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
শালবাগান এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে কাটিমন বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি তুলনামূলকভাবে কম।
চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, আগে কাটিমনের তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু নাবি জাত হওয়ায় এখন এর কদর বাড়ছে। আশ্বিনা আমও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ করা এই আম বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা মণ দরে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, কানসাট বাজারে এখনও আমের বেচাকেনা চলছে। তবে সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। চাষিদের সহায়তায় সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন মিয়া জানান, এবার আমের উৎপাদন বেশি হয়েছে। সরবরাহ বেশি হলে দাম কমে যাওয়া স্বাভাবিক। চাষিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার টন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ছালমা খাতুন বলেন, রাজশাহীতে ৯০ হেক্টর জমিতে কাটিমনের চাষ হচ্ছে এবং প্রতি বছর তা বাড়ছে। এই জাতের গাছ সারা বছর মুকুল দেয়, তাই পরিচর্যার মাধ্যমে বছরের বেশিরভাগ সময় আম পাওয়া যাচ্ছে।
শাহিনুল আশিক/এআরবি