বরিশালে ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণ, উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এই দুই মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন প্রমাণ মিলেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বরিশাল বিভাগে, বিশেষ করে বরিশাল ও বরগুনা জেলায় এবার শুরু থেকেই ডেঙ্গুর উচ্চ সংক্রমণের হার বিরাজ করছে। আগস্টে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হলেও সেপ্টেম্বরে আবার বেড়েছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ।
জুলাই-আগস্টে ধারাবাহিকভাবে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। তাই ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল। সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি কমলেও থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিতে পারে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, এপ্রিল মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। এ সময় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি ছিল। তবে জুলাই-আগস্টে কমলেও ফের সেপ্টেম্বরে বাড়তে শুরু করেছে।
চলতি বছর (১ জানুয়ারি থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ৪৭৫ জন রোগী। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১২ হাজার ৭৩ জন। ৩৭৪ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮ জন
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর (১ জানুয়ারি থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) বিভাগের ছয় জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ হাজার ৪৭৫ জন রোগী। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন ১২ হাজার ৭৩ জন। ৩৭৪ জন রোগী এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮ জন। মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে বরগুনার হাসপাতালে মারা গেছেন ১১ জন। বাকি ১৭ জনের ১৬ জন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন পটুয়াখালী হাসপাতালে মারা গেছেন।

জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে মার্চ মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল ৩৬৩ জন। মৃতের সংখ্যা ছিল শূন্যের কোঠায়। ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০৫ জনে। এ মাসে তিনজনের মৃত্যু হয়। অর্থাৎ আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুন হয়েছে আর মৃত্যুও বাড়তে শুরু করেছে। আর মৃতদের মধ্যে ২ জন বরগুনায় ও অপরজন বরিশালের মারা যান।
মে মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬৮৭ জনে। যা দিদ্বগুনেরও বেশি। তবে এ মাসে আক্রান্ত বাড়লেও মৃত্যু হয়নি কোনো রোগীর। জুন মাসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭৩১ জনে। আর মারা যান ১২ জন। আক্রান্ত দ্বিগুনের বেশি আর মৃত্যুর সংখ্যা চারগুণ। জুলাই মাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০৮২ জনে। আর মারা যান ১৭ জন। যার মধ্যে পটুয়াখালীতে ১ জন, বরিশালে ১০ জন ও বরগুনায় ৬ জন।
এ ছাড়া, আগস্ট মাসে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৩২৭ জন। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ জনে। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ১২৪৭৫ জনে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৮ জনে। অর্থাৎ ২১ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, বিভাগের অন্য জেলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বরিশাল ও বরগুনায় সংক্রমণ আবার ভয়াবহ হচ্ছে। জুলাই-আগস্টে ধারাবাহিকভাবে ভারী বৃষ্টি হলেও সংক্রমণ কম ছিল। তবে সেপ্টেম্বরে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় সংক্রমণ বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধারাবাহিক ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হলেও অল্প সময়ে নেমে যাওয়ায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা টিকে থাকার জন্য সহায়ক নয়। কিন্তু থেমে থেমে অল্প বৃষ্টি হলে বিভিন্ন ছোট পাত্রে, নিচু জায়গায় কিংবা বাড়ির আশপাশে পানি জমে থাকে। এটি এডিস মশার লার্ভার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। তবে রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা হাসপাতালগুলোতে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গুবাহিত মশার বিস্তার যেভাবে ঘটছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সচেতনতার বিকল্প নেই।
এএমকে/