ওএমএস ডিলারের বিরুদ্ধে ৭৭ টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭.৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ওএমএস (খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি) এর একজন ডিলার ওই চাল উত্তোলনও করেন। কিন্তু উপকারভোগীরা অভিযোগ করেছেন, তারা সেই চাল পাননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মহম্মদপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে টিসিবির কার্ডধারী উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব কার্ডধারী প্রতি মাসে ইউনিয়নভিত্তিক টিসিবি ডিলারদের কাছ থেকে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে চাল, তেল, চিনি ও ডাল কেনার সুযোগ পান।
গত জুলাই মাসে উপকারভোগীরা ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের প্যাকেজ পেলেও চাল পাননি। তখন তাদের জানানো হয়, ওই মাসে চালের কোনো বরাদ্দ আসেনি। অথচ সরকারি নথি অনুযায়ী, চাল বরাদ্দ হয়েছিল এবং ওএমএস ডিলার তা উত্তোলনও করেছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি চাল ছাড়া অন্য পণ্য (তেল, চিনি, ডাল) সরাসরি ডিলারদের সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ আসে খাদ্য বিভাগ থেকে। সেই অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ওএমএস ডিলারদের ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। এরপর টিসিবির ডিলাররা ওই চাল ২৮ টাকা কেজিতে ক্রয় করে উপকারভোগীদের কাছে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুলাই খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমানের স্বাক্ষরিত দুটি বিলি আদেশে (ডিও) হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭.৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে চাল উত্তোলনও করা হয়।
এক মাস চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে এক নারী জানান, আগস্টে চালসহ পুরো প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে চাল ছাড়া বাকি তিনটি পণ্য পেয়েছেন। তখন জানানো হয়েছিল, চাল বরাদ্দ হয়নি।
শরিফা নামে আরেকজন বলেন, ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাই। কিন্তু বাজারে ওই চাল কিনতে গেলে ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পেয়ে কষ্ট হয়েছে।
বিনোদপুর বাজারের এক ফল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জুলাই মাসে ডিলার জানায় চাল ফুরিয়ে গেছে।
উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার হোসনিয়া কান্তা ঋতু। গত ২৩ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ আরও দুইজন ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান। তবে বাকি দুজনের কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকায় ঋতুকেই ৭৭.৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, টিসিবির চাল আসে খাদ্য বিভাগ থেকে। টিসিবির পণ্য শুধু তেল, চিনি, ডাল। ওএমএস ডিলার চাল উত্তোলন করেছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের ডিলারদের সরবরাহ না করে কালোবাজারে বিক্রি করেছে।
এদিকে চাল উত্তোলনের বিষয়টি কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, ১৮ সেপ্টেম্বর তদন্তে নামে উপজেলা প্রশাসন। চাল বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুর আক্তার। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মজনুর রহমান ও উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওএমএস ডিলার হোসনিয়া কান্তা ঋতুর মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মজনুর রহমান ঢাকা পোস্ট-কে বলেন, ওএমএস ডিলার হোসনিয়া কান্তা ঋতুকে ৭৭.৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি চাল টিসিবি ডিলারদের কাছে সরবরাহ করেননি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, একটি ভাঙা গুদামে চালগুলো সংরক্ষণ করা আছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন ইউএনও’র কাছে জমা দেব। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বলেন, তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আমরা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছি এবং খুব শিগগিরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেব।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনুর আক্তারের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনিও রিসিভ করেননি।
তাছিন জামান/এআরবি