স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সমির মণ্ডল

‘২০১৩ সালে আমি ও জয়ন্তী ভালোবেসে বিয়ে করি। দীর্ঘ নয় বছরেও আমাদের সন্তান হয়নি। চিকিৎসার পর ২০২২ সালের ১১ জুন প্রতিভার জন্ম হয়। আমার স্ত্রীর স্বপ্ন ছিল, প্রতিভাকে ডাক্তার বানাবে। কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। ডেঙ্গু কেড়ে নিলো আমার স্ত্রী ও সন্তানকে। আমার ছোট মেয়েটার বয়স ৫ মাস। সেও মা হারা হলো। আমি এখন কীভাবে বাঁচবো।’
এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন সমির মণ্ডল। স্ত্রী ও কন্যা সন্তানকে একসঙ্গে হারিয়ে তিনি এখন পাগলপ্রায়।
সমির মণ্ডল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তিনি স্ত্রী জয়ন্তী মণ্ডল ও দুই মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর মিরপুর-১ টোলারবাগ স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। সমির মণ্ডলের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামে।
সমির মণ্ডল জানান, গত ১৩ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে তার স্ত্রী জয়ন্তী মণ্ডল জ্বরে আক্রান্ত হন। পরদিন ১৪ সেপ্টেম্বর ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে ১৫ সেপ্টেম্বর মেয়ে প্রতিভা মণ্ডলও জ্বরে আক্রান্ত হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষায় তারও ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।
১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জয়ন্তী বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ হেলথ সায়েন্স (বিআইএইচএস) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর চিকিৎসকরা জানান, তার রক্তচাপ পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে ওইদিন রাত ১২টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
অন্যদিকে প্রতিভার অবস্থারও দ্রুত অবনতি হতে থাকে। ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে তাকে বিআইএইচএস হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা পিআইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেখানে সুবিধা না থাকায় প্রতিভাকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
২১ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসকরা লাইফ সাপোর্ট খুলে দিয়ে জয়ন্তীকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিনই বিকেলে তাকে বালিয়াকান্দি উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামে সমাহিত করা হয়। পরে ২২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় প্রতিভা মণ্ডল। ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে তাকে মায়ের পাশে সমাহিত করা হয়।

বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, আমার ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামের সুকুমার মন্ডলরে ছেলের স্ত্রী ও কন্যা দুজনই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলো। গত রোববার জয়ন্তী মণ্ডল ও সোমবার তার মেয়ে প্রতিভা মণ্ডল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পরে তাদের গ্রামে নিয়ে সমাহিত করা হয়েছে। তাদের এই অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাসুদ বলেন, জয়ন্তী মণ্ডল ও তার কন্যা প্রতিভা মণ্ডল ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এটা সত্যি দুঃখজনক। ডেঙ্গু নিয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরএআর