রাস্তা পার হতে গিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন রওশন আরা

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। তখন ঘরে ফেরা মানুষের ভিড়ে মহাসড়কে ছিল যানবাহনের চাপ। কেউ হেঁটে, কেউ বা ছোট-বড় নানা ধরনের যানবাহনে ফিরছিলেন গন্তব্যে। দ্রুতগতির যানগুলো তখন একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায়। গাড়ির শব্দ আর হর্নে মুখর চারদিক। এমন সময় জীবনের শেষ যাত্রায় রাস্তা পার হতে এগিয়ে যান বৃদ্ধা রওশন আরা (৭২)। কিন্তু এক দ্রুতগতির নৈশকোচের ধাক্কায় মুহূর্তেই নিভে যায় তার জীবনের আলো।
গতকাল শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের জায়গীর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রওশন আরা নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভিক্ষা করে জীবনযাপন করতেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বড়দরগা হাইওয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনার সময় ভিক্ষার ঝুলি বুকে আঁকড়ে ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু রাস্তার ওপারে পৌঁছাতে না পেরে চলে যেতে হলো জীবনের ওপারে।
রওশন আরার জীবনের গল্পটিও তার মৃত্যুর মতোই কষ্টের। বহু আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর আর কোনো ভরসার মানুষ ছিল না। দারিদ্র্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতেন তিনি। গ্রামের হাট-বাজারে মানুষের কাছে হাত পেতে যা পেতেন, তা দিয়েই কোনোরকমে চলত দিন। কখনো কারও দেওয়া এক মুঠো ভাত, কখনো দু-এক টাকা এই সামান্য দয়াতেই বেঁচে ছিলেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, রাতে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগামী নৈশকোচ তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে বড়দরগা হাইওয়ে থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানান, রওশন আরাকে প্রায়ই দেখা যেত বাজারের এক কোণে বসে থাকতে। শীতের সকালে পাতলা শাল জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে কিংবা গরমের দুপুরে ঘামে ভেজা মুখে, তবুও ভিক্ষার ঝুলি হাতে মানুষের কাছে সাহায্য চাইতেন। সেটা তার জন্য লজ্জার কিছু ছিল না, বরং ছিল বেঁচে থাকার প্রয়োজনে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদুল হক বলেন, রওশন আরা ভিক্ষা করে চলতেন। তার এমন মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। দাফন-কাফনের জন্যও তার কিছু নেই। অনেক আগেই তার স্বামী মারা গেছেন।
বড়দরগা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গণি বলেন, জায়গীর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক বৃদ্ধা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এআরবি