কটিয়াদীতে জমে উঠেছে ৫০০ বছরের পুরোনো ঢাকের হাট

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বসেছে ঢাক-ঢোলসহ বাদ্যযন্ত্রের এক বিশাল ও ঐতিহ্যবাহী হাট।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে শুরু হওয়া এই হাট চলবে আজ রোববার পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য বাদকদল তাদের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এখানে হাজির হয়েছেন।
কটিয়াদীর এই ঢাকের হাট প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য বহন করে। স্থানীয়দের মতে, ঢাক-ঢোলের বাজনা ছাড়া পূজা পূর্ণতা পায় না, আর সেই প্রয়োজন থেকেই এই হাটের জন্ম।
নাম ঢাকের হাট হলেও, এখানে ঢাক বা বাদ্যযন্ত্র কেনাবেচা হয় না। বাদকদলগুলো অর্থের বিনিময়ে পূজা চলাকালীন আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। বাদকদের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে চুক্তিমূল্য ১০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত হয়।
এখানে ঢাক, ঢোল, কাঁসর, সানাই, বাঁশি, কর্তাল, খঞ্জরিসহ বাঙালির চিরচেনা সব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বাদকরা তাদের নৈপুণ্য প্রদর্শনের মহড়ায় মেতে ওঠেন।
কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকার নবাবগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাদকদল এই হাটে আসে। তথ্য-প্রযুক্তির কারণে ফোনে চুক্তি হলেও, এখনও অনেকেই দক্ষতা যাচাই ও চুক্তি চূড়ান্ত করতে সরাসরি হাটে ভিড় করেন।

জনশ্রুতি আছে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় সেরা ঢাকিদের সন্ধান করতে এই হাটের প্রচলন শুরু করেন। রাজা নিজে বাজনা শুনে সেরা দলকে বেছে নিতেন।
তবে ঐতিহ্যবাহী এ হাটে আসা ঢাকিদের আক্ষেপেরও শেষ নেই। সরকারি সহায়তায় ঢাকিদের জন্য একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ করা হলেও, সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও সঠিক তদারকির অভাবে তা অসম্পূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। এ কারণে অনেক ঢাকি ক্রমেই হাটবিমুখ হচ্ছেন।
কটিয়াদী পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সেক্রেটারি জনি কুমার সাহা জানান, এই ঢাকের হাট ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির মিলন মেলায় পরিণত হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও পূজা উদযাপন পরিষদ বাদকদলগুলোর জন্য থাকা-খাওয়া, নিরাপত্তা এবং সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে।
কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, পূজার আয়োজক ও বাদকদের নিরাপত্তার জন্য কটিয়াদী মডেল থানা পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং হাটে পুলিশের একটি মোবাইল টিম কাজ করছে।
কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখছে এবং আশা করা হচ্ছে সুশৃঙ্খলভাবে হাটের কার্যক্রম শেষ হবে।
মোহাম্মদ এনামুল/আরকে