আলোয় ঝলমলে কুয়াকাটা, প্রবারণা অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ জনপদে উৎসবের আমেজ

পটুয়াখালীর অপরূপ সুন্দর সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার আকাশ আজ আলোয় ভরে গেছে। শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। ধর্মীয় পবিত্রতা আর লোকজ সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিলন ঘটেছে কুয়াকাটার রাখাইন পল্লীগুলোতে। গৌতম বুদ্ধের বর্ষাবাস শেষ হওয়ার পর আশ্বিনী পূর্ণিমায় এই উৎসব পালন করেন বৌদ্ধ অনুসারীরা, এটি একটি বহু পুরোনো ঐতিহ্য।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় কুয়াকাটার রাখাইন মহিলা মার্কেট মাঠে শতাধিক ফানুস উড়িয়ে শুরু হয় উৎসবের মূল আয়োজন। আকাশজুড়ে উড়ছে রঙিন ফানুস, আর নিচে হাজারো মানুষ প্রার্থনায় মুখর সব মিলিয়ে এটি যেন এক ধর্মীয় মিলনমেলা।
দিনের শুরুতেই উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় পুণ্য প্রার্থনায়। সকাল ৭টায় পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ, বুদ্ধপূজা এবং ধর্মদেশনার মাধ্যমে ধর্মীয় পরিবেশে উদযাপন শুরু হয়। বয়স্ক রাখাইন নারী-পুরুষেরা ফলমূল ও নানা রকমের পিঠাপুলি এনে ভিক্ষুদের দান করেন, বুদ্ধের স্মরণে। প্রতিটি রাখাইন পরিবারে চলে আলাদা উৎসব। ঘরে ঘরে রান্না হচ্ছে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। নারীরা পরেছেন নতুন থামিন ও ব্লাউজ, আর পুরুষেরা পরেছেন ধুতি ও জ্যাকেট। সকলে মিলে বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে অংশ নিচ্ছেন প্রার্থনায়।
কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক শহিদুল ইসলাম রুবেল বলেন, আমি পরিবার নিয়ে কুয়াকাটায় ঘুরতে এসেছি। সন্ধ্যায় বিচে যাচ্ছিলাম, কিন্তু পথে দেখি রাখাইন মার্কেটের মাঠে ফানুস উৎসব চলছে। আমার বাচ্চারা এত বড় ফানুস উৎসব আগে কখনও দেখেনি, তাই তাদের দেখানোর জন্যই এখানে এসেছি।
শ্রী মঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ভান্তে ইন্দ্র বংশ বলেন, আমরা ২৮ বুদ্ধের আসন পরিষ্কার করে নতুনভাবে সাজিয়েছি। আজ ৩১টি কঠিন চীবর দান করা হয়েছে, আর শতাধিক ফানুস উড়িয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।
মিশ্রীপাড়া সিমা বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি মংলাচি তালুকদার বলেন, এটা শুধু উৎসব নয়, এটি আমাদের আত্মার আলো জ্বালানোর একটি পবিত্র দিন। এ দিনে আমরা জগতের সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করি।
কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু উত্তম বলেন, আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ বর্ষাবাস শেষে যেভাবে প্রবারণা পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেই পথ অনুসরণ করেই আমরা আজও শান্তি, সম্প্রীতি ও শুভকামনার বার্তা নিয়ে এই উৎসব পালন করি।
মহিপুর থানার কালাচানপাড়া, মিশ্রীপাড়া, কেরানীপাড়া, আমখোলা, নয়াপাড়া, বৌলতলী পাড়াসহ পুরো কুয়াকাটাজুড়ে যেন এক আনন্দঘন পরিবেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পদচারণায় কুয়াকাটা পরিণত হয়েছে এক ক্ষণস্থায়ী ধর্মীয় নগরীতে। আলোয় ঝলমলে আকাশ, ধূপ-ধুনোর সুবাস, ধর্মীয় সংগীত আর প্রার্থনার মৃদু ধ্বনিতে আজকের প্রবারণা পূর্ণিমা যেন এক মহাজাগতিক আরাধনার দিন।
এসএম আলমাস/এআরবি