তিস্তার ভাঙনে কুড়িগ্রামে পানিবন্দী ৩ হাজার মানুষ

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে একদিনেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ১৬টি বসতবাড়ি ও ৪টি মসজিদ। তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বাড়তে থাকায় নদী তীরবর্তী চারটি গ্রামে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি, ফলে প্রায় ৭০০ পরিবারের প্রায় ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
তীব্র স্রোতের কারণে ইতোমধ্যে প্রায় ৫ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে আরও শত শত বিঘা জমির আগাম ফলনসহ দুই শতাধিক বাড়িঘর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিগত তিনদিন ধরে উজানে ভারী ও অতিভারী বর্ষণের ফলে এবং তিস্তা ব্যারেজের গেট খুলে দেওয়ায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাব খাঁ, চর নাখেন্দা, সরিষাবাড়ি ও চর গতিয়াসামের মাঝেরচরে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মাঝেরচর গ্রামে নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত তিন দিনে এই গ্রামের প্রায় ৫ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।
মাঝেরচর গ্রামের খোরশেদ আলী জানান, হঠাৎ করে রাতের বেলা পানি বাড়তে শুরু করলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। নদী তীরবর্তী অনেকেই তখন ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। যাদের সামর্থ্য আছে তারা নৌকা ভাড়া করে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। অনেকেই উঁচু জায়গায় বাড়িঘর সরিয়ে রাখছেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাঝেরচর গ্রামের আছরুদ্দির স্ত্রী রোজিনা রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, রাত তিনটা থেকে পানি বাড়ছে। তখন রান্না করতে পারিনি। এখন দুপুরে রান্না বসিয়েছি। চারদিকে শুধু কষ্ট পানি, খাবার, থাকার জায়গা সবকিছুরই কষ্ট। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই।
সাবিনা নামের এক নারী জানান, ঘরের ভিতর পানি ঢুকে পড়েছে। দুই সন্তান আর মাকে নিয়ে বিছানার ওপর বসে আছি। রান্না করা যাচ্ছে না। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, বাচ্চা সব নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
ওসমানের ছেলে সহিজল জানান, গতকাল থেকেই বন্যায় ঘর ডুবে গেছে। মানুষ খুব কষ্টে আছে। কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ খবর নিচ্ছেন না।
আরও পড়ুন
ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, ইউনিয়নের খিতাব খাঁ গ্রামে ২০০টি, চর নাখেন্দায় ২০০টি, সরিষাবাড়িতে ৫০টি এবং চর গতিয়াসামের মাঝেরচরে ২৫০টি বাড়ি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মাঝেরচর গ্রামে একদিনেই ১৬টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে ওসমানের ছেলে সহিজল, সালমানের ছেলে সালাম, হায়দার মুন্সির ছেলে মোস্তাক, তাসলিমের ছেলে বোরহান, নুরুলের ছেলে মোকাদ্দেস ও কুদ্দুছ, ভুট্টুর ছেলে খোরশেদ, হামিদারের ছেলে অহিজল, শুটকোর ছেলে জয়নাল তেলি, মহুবরের ছেলে জহুরুল, জহুরুলের ছেলে তাইজুল, হাবিলের ছেলে আলমগীর, আনছার তেলির ছেলে অবির উদ্দিনসহ আরও তিনটি পরিবার। এছাড়াও এই চরের তিনটি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়েছে এবং একটি মসজিদ ভাঙনের মুখে রয়েছে।
এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল ইমরান জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ৮০০ ত্রাণ প্যাকেট মজুদ আছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে দ্রুত সহায়তা প্রদান করা হবে। আমরা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটর করছি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙনের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
মমিনুল ইসলাম বাবু/এআরবি