দীর্ঘ ৬০ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি রাজবাড়ীর বিসিক শিল্প নগরীতে

দীর্ঘ ৬০ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি রাজবাড়ীর একমাত্র বিসিক শিল্প নগরীতে। বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে রয়েছে। দ্রুত এই শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দসহ অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি উদ্যেক্তা ও ব্যবসায়ীদের।
জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর এলাকায় ১৯৬৪ সালে ১৫.২৮ একর জমির ওপর নির্মিত হয় রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী। ৭৭টি প্লট নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই শিল্পনগরী বেশিরভাগই বন্ধ। প্রথমদিকে ৫৩টি প্রতিষ্ঠান চালু হলেও ৬০ বছরের মাথাই উন্নয়নের বদলে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে এই শিল্পনগরী। লোডশেডিং, খাবার পানির সংকট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজোসহ রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্ঠপোকতার কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি শিল্পনগরীর বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিসিক শিল্প নগরীতে গড়ে ওঠা বেশিরভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ। বিভিন্ন যায়গায় ময়লা-আর্বজনা ও চারপাশ জঙ্গলে ভরা। অনেক প্লট রয়েছে পরিত্যক্ত। রাস্তার অবস্থা বেহাল, সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় শিল্পনগরীর বেশিরভাগ এলাকায়। কোনো রকমে সচল রয়েছে সিলভার পণ্য তৈরির কারখানা, চাল ও স্বয়ংক্রিয় ময়দার মিল, তেলের মিল, আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, আড়ং উৎপাদন কেন্দ্র ও অরবিট এগ্রোসহ কয়েকটি কারখানা।

সিলভার পণ্য তৈরির কারখানার হারুন নামের একজন বলেন, বিসিক অনুযায়ী লোডশেডিং হওয়ার কথা না। তবুও মাঝে মাঝে লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে আমাদের মেশিন চলে না, কাজের অনেক ক্ষতি হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিসিকের এক ব্যবসায়ী বলেন, এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রতিনিয়ত এই এলাকায় ঘটছে চুরির ঘটনা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের তার, ফ্যাক্টরির মোটর চুরি হয়। বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে বলার পর মিলছে না সমাধান।
অরবিট এগ্রোর কয়েকজন কর্মচারী বলেন, বৃষ্টি হলে আমাদের গেটের পাশেই হাঁটু পানি জমে যায়। ড্রেনগুলো নোংরা, পরিষ্কার করা হয় না। বেশি বৃষ্টি হলে বাথরুমের ময়লা পানি (দুর্গন্ধ) আসে। পানি বের হতে না পেরে ফ্যাক্টারির ভেতরে চলে আসে। আমাদের যাতায়াতের সমস্যা হয়। এ ছাড়া, খাবারের পানিতে অনেক সমস্যা রয়েছে, পানিতে আয়রন। মাঝে মাঝে পানি দিয়ে দুর্গন্ধ আসে। আবার বিদ্যুতের সমস্যাও রয়েছে। সব মিলিয়ে এই শিল্পনগরী নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। আমাদের দাবি দ্রুত এই শিল্প নগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন করা হোক।

সাগর অটো ফ্লাওয়ার ও সাগর অয়েল অয়েল মিলের সহকারী ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানে প্রধান সমস্যা হচ্ছে ড্রেনের সমস্যা, রাস্তা ভাঙাচোরা, একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি জমে যায়। পানি নিষ্কাশনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি জমলে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসা যাওয়া, গাড়ি চলাচলে অনেক সমস্যা হয়। রাস্তাও ভাঙাচোরা রয়েছে। আমাদের মিলের নিজস্ব খরচে বেশ কয়েকবার রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। কিছু কিছু বৈদ্যুতিক পিলারে রাতে লাইট জলে না। রাত হলেই বিসিক অন্ধকার থাকে। আমরা বিসিকের কর্মকর্তাকে একাধিকবার আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরি। কিন্তু বলে কি হবে, দীর্ঘ কয়েক বছরেও কোনো সমস্যাই সমাধান হচ্ছে না।
রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ইমামুল করিম জকি বলেন, বিসিকের ব্যবসায়ীদের জন্য সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। জমি ট্যাক্সের টাকা কয়েকগুণ বেড়েছে। যে কারণে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। বিসিক উন্নয়ন করতে গেলে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে উদ্যোক্তাদের নিয়ে বসতে হবে। উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলো শুনে সেগুলোর সমাধান করতে হবে।

রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বেশ কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে যে রাস্তাটি রয়েছে সেটির অবস্থা খারাপ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, বাউন্ডারিসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে বিসিক হেড অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী অর্থ বছরে কিছু বরাদ্দ পাওয়া যেতে পারে। বরাদ্দ পেলে সমস্যাগুলো ধাপে ধাপে সমাধান করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএমকে