বিসিএস ক্যাডারকে ভাই ডেকে ধমক খেয়েছিলেন হৃদয়

রাজবাড়ী সরকারি কলেজে এইচএসসির প্রথম দিনে এক বিসিএস ক্যাডার শিক্ষককে না চিনে ভুলবশত ভাই সম্বোধন করেছিলেন হৃদয় পাল (২৮)। এরপর তাকে ধমক দিয়েছিলেন সেই শিক্ষক। সেই হৃদয় এবার ৪৯তম বিসিএসে (সাধারণ শিক্ষা) বাংলা বিষয়ে ৬ষ্ঠ মেধাক্রমে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত সোয়া ১০টার দিকে এই ফলাফল প্রকাশিত হয়।
হৃদয় পাল রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নের হাটবাড়িয়া গ্রামের বিষ্ণু পাল ও লক্ষ্মী পাল দম্পতির বড় ছেলে। তার বাবা একজন প্রতিমা শিল্পী এবং মা গৃহিণী। ছোট ভাই অন্তর পাল স্কয়ার কোম্পানিতে চাকরি করেন।
জানা গেছে, হৃদয় পাল ২০১৪ সালে বেলগাছি আলিমুজ্জামান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপর তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০১৬ সালে জিপিএ ৪.৪২ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭ সেশনে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে ৩.৪১ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে ৩.৩৯ সিজিপিএসহ কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।
এরপর থেকেই তিনি বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তিনি ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি পাস করে লিখিত পরীক্ষা দেন এবং ৪৭তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাও দেন। অবশেষে ৪৯তম বিসিএস (বিশেষ) পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে ৬ষ্ঠ মেধাক্রমে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
৪৯তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) বাংলা বিষয়ে ৬ষ্ঠ মেধাক্রমে সুপারিশপ্রাপ্ত হৃদয় পাল বলেন, এইচএসসিতে ভর্তি হওয়ার দিনে ভুল করে এক শিক্ষককে ভাই বলে ফেলেছিলাম। তিনি আমাকে ধমক দিয়েছিলেন, বিষয়টি আমার খুব খারাপ লেগেছিল। ঘটনাটি আমাকে ভীষণভাবে আঘাত করেছিল। পরে একদিন কলেজের গণিত শিক্ষকের কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চাকরির ভাইভা পরীক্ষার কাগজপত্র সত্যায়িত করাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্যার ব্যস্ততা দেখিয়ে আমাকে অপেক্ষা করতে বললেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও তিনি কাগজে স্বাক্ষর করলেন না। পরে কলেজের এক ম্যাডামের কাছে গিয়ে সত্যায়িত করাই। তিনি তখন বলেছিলেন, তুমি একদিন বড় কিছু করবে, না হলে এই সত্যায়নের মর্যাদা থাকবে না। এই দুইটি ঘটনা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।
তিনি আরও বলেন, সেদিন থেকেই ঠিক করেছিলাম, আমিও একদিন বিসিএস ক্যাডার হয়ে শিক্ষক হবো। সৃষ্টিকর্তা আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন। অধ্যবসায়, ধৈর্য আর পরিশ্রমের ফলেই আজকের এই অর্জন।
হৃদয় পাল আরও বলেন, আমার এই সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার বাবা-মায়ের। আমার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া, আর বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল আমাকে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে দেখতে। দুই স্বপ্নই একসঙ্গে পূরণ হলো। ছোট ভাই আমার আগে চাকরি পেয়েছিল, সে আমাকে মানসিক ও আর্থিকভাবে সবসময় সহায়তা করেছে। সবচেয়ে বেশি আনন্দ লাগছে বাবা-মা, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মুখে হাসি দেখতে পেয়ে। তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এআরবি