সন্তান রেখে উধাও ‘পাগলি’, বাবা-মা পেল সেই নবজাতক

যশোরের শার্শা সীমান্তে হাকর নদীর পাড়ের একটি বাঁশ বাগান থেকে উদ্ধারকৃত নবজাতককে দত্তক নিয়েছে নিঃসন্তান দম্পত্তি সানাউর ও সুমাইয়া। তারা ঢাকার গুলশান-বাড্ডার বাসিন্দা। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) তাদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে নবজাতককে তুলে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
এর আগে ১২ জন নিঃসন্তান দম্পত্তির বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে আবেদন করেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি নবজাতককে দত্তক দিতে আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
এরপর সানাউর রহমান ও সুমাইয়া নামে দম্পত্তির হাতে শিশুটিকে হস্তান্তর করেন শার্শা উপজেলা প্রশাসনের সদস্যরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার দিপক কুমার সাহা, সমাজসেবা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম, বিআরডিবি অফিসার সাকির হোসেন, নারী ও শিশু বিষয়ক অফিসার জাহান ই গুলশান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলীম প্রমুখ।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, শিশুটির ভবিষ্যতের জন্য শার্শা উপজেলা প্রশাসন ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। এরপর স্থানীয় পত্রিকায় উদ্ধারকৃত শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য আগ্রহী নিঃসন্তান ব্যক্তিদের আবেদন করতে বলা হয়। সেই মোতাবেক আজ ১২ দম্পত্তি শিশুটিকে নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। সেখানে যাচাই-বাছাই করে মঙ্গলবার যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার গাইদঘাট গ্রামের শিপন ও সুমাইয়া দম্পত্তির কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়। তাদের বর্তমানে ঢাকার গুলশান-বাড্ডা এলাকায় বসবাস করছেন।
এ ব্যাপারে সানাউর রহমান ও সুমাইয়া জানান, ১৫ বছর তাদের বিবাহিত জীবন। তবে কোনো সন্তান হয়নি। এজন্য পত্রিকায় খবর শুনে ছেলে শিশুটি নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তারা শিশুটিকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছেন।
গত ১২ নভেম্বর যশোরের বেনাপোল সীমান্তের নামাজগ্রাম ও গাজীপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হাকর নদীর তীরের একটি বাঁশ বাগান থেকে নবজাতক ও তার মানসিক ভারসাম্যহীন মাকে উদ্ধার করে এলাকাবাসী। তবে কিছুক্ষণ পরই সদ্যজাত সন্তানকে রেখে উধাও হয়ে যান ওই নারী।
গাজীপুর গ্রামের আলি হোসেন কালু (৪৫) বলেন, ওই দিন আমার বসত বাড়ির পাশে বাঁশ বাগানে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। সকালে স্ত্রী মোছা. নারগিস বেগমসহ স্থানীয় লোকজন নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, একজন পাগলি নবজাতকটি প্রসব করেছে। তখন পাগলিকে কাপড় পরানো হয় এবং বাচ্চার নাড়ি কাটা হয়। তবে পাগলি তার সন্তানকে রেখে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে আর পাইনি। সেই থেকে ছেলে বাচ্চাটি আমাদের হেফাজতে ছিল। সে সময় এ বিষয়ে উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।
রেজওয়ান বাপ্পী/আরকে