কম্পিউটার উপহার পেলেন বাবার কোলে চড়ে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নজয়ী নাইছ

জন্মগত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে প্রতিদিন এগিয়ে চলেছেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার বহালগাছা গ্রামের দরিদ্র নজরুল ইসলামের মেয়ে, নাইছ খাতুন। দুই পায়ে শক্তি নেই, ডান হাত প্রায় অচল, শুধু বাঁ হাত নিয়ে তার লক্ষ্য উচ্চশিক্ষা অর্জন করছেন। প্রতিদিন বাবা-মায়ের সহায়তায় পরীক্ষা কেন্দ্র বা ক্লাসে পৌঁছান, এবং তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে পরিচিত করেছে সাহসী এক তরুণী হিসেবে।
১৭ নভেম্বর ‘মানুষ বলে প্রতিবন্ধী, আমি দেখি আমার মেয়ে একজন যোদ্ধা’ শিরোনামে নাইছের সংগ্রামের গল্প ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে ঢাকার সিনিয়র সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহিদ হাসানের। তিনি বর্তমানে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অধীনে দায়িত্ব পালন করছেন। নাইছের প্রয়োজনীয় শিক্ষাসামগ্রী এবং বিশেষ করে একটি কম্পিউটারের অভাব সম্পর্কে জানার পর, তিনি এবং তার সহকর্মীরা যৌথ উদ্যোগে নাইছকে একটি নতুন কম্পিউটার উপহার দেন।
ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ হাসান বলেন, নাইছ আমাদের সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যে সাহস এবং অধ্যবসায়ের পরিচয় সে দিয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা যদি তার স্বপ্নপূরণে সামান্য সাহায্য করতে পারি, তাতেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক।
কম্পিউটারটি গ্রহণের সময় আবেগে ভেঙে পড়েন নাইছের বাবা-মা। তাদের কাছে এটি শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং মেয়ের উচ্চশিক্ষার পথে সবচেয়ে বড় সহায়।
নাইছের বাবা-মা বলেন, এই কম্পিউটারটি আমাদের মেয়ের শিক্ষার জন্য অমূল্য উপহার। আমাদের কাছে এটি শুধু একটি উপহার নয়, এটি তার ভবিষ্যৎ গড়ার এক অনন্য সহায়।
নাইছ নিজেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এই কম্পিউটারটি আমার পড়াশোনা, পরীক্ষা প্রস্তুতি এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে অনেক সাহায্য করবে। স্যারকে ধন্যবাদ, তিনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপকার করেছেন।
এদিকে কম্পিউটার উপহারের খবর শুনে নাইছের বন্ধু আব্দুর রহিম বলেন, নাইছের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং তার সংগ্রামের গল্প আমাদের সকলকে শেখায়, যে কোনো সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে সঠিক সাহায্য ও মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। নিঃসন্দেহে, সে আমাদের সমাজে এক শক্তিশালী প্রেরণা। কম্পিউটারটি ওর জানার আগ্রহকে বাড়িয়ে দেবে। নয়, এটি তাই এক বিশেষ উপহার যা কখনো থামে না, আর যা কখনো পুরনো হয় না। মানবতা সবসময় জীবন্ত থাকে, প্রতিটি নতুন দিনেই নতুন করে জন্ম নেয়। তেমন এক উদাহরণ হলো নাইছ এবং তার পরিবার।
ধুনট উপজেলার ইউএনও প্রীতিলতা বর্মন বলেন, আমি বিষয়টি আগে জানতাম না। তবে তার নাম-ঠিকানা নোট করে রাখলাম। খোঁজ-খবর নিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করব।
আরকে