বৈদ্যুতিক ফাঁদে আবারও হাতির মৃত্যু, পল্লীবিদ্যুৎকে দায়ী করছে বনবিভাগ

কক্সবাজারের উখিয়ায় আবারও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকালে উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম খয়রাতিপাড়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল সংলগ্ন কৃষিজমিতে মৃত একটি হাতি পড়ে থাকতে দেখতে পান স্থানীয়রা। পরে ঘটনাস্থলে বনবিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত হন এবং মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হাসান রনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কৃষিজমির চারপাশে আগে থেকে পাতানো বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকে হাতিটির মৃত্যু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা আলামত সংগ্রহ করেছেন, ফরেনসিকে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ি এলাকা ও জনবসতির সীমান্তে সম্প্রতি বন্য হাতির চলাচল বেড়ে যাওয়ায় কিছু অসাধু ব্যক্তি ফসল রক্ষার নামে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে বৈদ্যুতিক ফাঁদ ব্যবহার করছেন। এতে প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণীরা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
উখিয়ার স্কুল শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, টাকার বিনিময়ে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রেখে একটি চক্র হাতি নিধন করছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। এখনি পদক্ষেপ না নিলে এখানে কোনো হাতি আর অবশিষ্ট থাকবে না।
মাত্র ৩ মাস আগে ১৭ সেপ্টেম্বর একইভাবে বৈদ্যুতিক ফাঁদের কারণে উখিয়ার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আরও একটি হাতির মৃত্যু হয়েছিল।
এ ঘটনার পুনরাবৃত্তির কারণে উখিয়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধের অনীহাকে দায়ী করেছেন বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, সংরক্ষিত বনের জায়গায় অবৈধভাবে চালু থাকা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করতে পল্লীবিদ্যুৎকে বারবার চিঠি দিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। তারা পদক্ষেপ নিলে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরি অসম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এই রেঞ্জ কর্মকর্তা আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে আবাসস্থলে ক্যাম্প তৈরি হওয়ায় হাতিরা লোকালয়ে আসতে বাধ্য হয়। এমনিতেই হাতির করিডর এখন সংকটাপন্ন। তার ওপর মানবসৃষ্ট বৈদ্যুতিক ফাঁদ জীববৈচিত্র্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বনকর্মকর্তার অভিযোগ প্রসঙ্গে উখিয়া পল্লীবিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) কাইজার নুর বলেন, ২০২২ সালে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির কারণে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কিছু সংযোগ পৌঁছেছে। আমরা বনবিভাগের চিঠি পেয়েছি, কিন্তু একার পক্ষে আমাদের ব্যবস্থাগ্রহণ সম্ভব নয়। শীঘ্রই যৌথ অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
একটা সময় উখিয়া-টেকনাফের অভয়ারণ্য ছিল। হাতির পালের পদচারণায় মুখরিত, কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট সহ নানা কারণে বর্তমানে এশিয়ান বন্যহাতির অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে এই অঞ্চলে।
পরিবেশবিদরা মনে করছেন, এখনই যুগোপযোগী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সংকটাপন্ন প্রাণী বন্যহাতি বিলুপ্ত হতে পারে এবং সামগ্রিক অর্থে এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রকৃতি ও পরিবেশ।
ইফতিয়াজ নুর নিশান/আরকে