মায়ের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আটকে আছে ছেলের দাফন

রাজধানীতে শুক্রবার সকালে ভূমিকম্পে ভবনের রেলিং ধসে নিহত মেডিকেল ছাত্র রাফিউল ইসলাম রাফির (২১) জানাজা সম্পন্ন হলেও, দাফনের জন্য অপেক্ষা করছে স্বজনেরা। একই দুর্ঘটনায় রাফির মা অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মাকে শেষবারের মতো তার ছেলেকে দেখানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য আটকে আছে দাফন কার্য।
শনিবার (২২ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে তার মরদেহ পৌঁছায় বগুড়ার গোয়াইল রোডে। মরদেহ আসার পর পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজন, প্রতিবেশী, সহপাঠী ও পরিচিতজনেরা। রাফি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
একই ঘটনায় গুরুতর আহত রাফিউলের মা নুসরাত জাহান মিতাকে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে করে বগুড়ায় আনা হয়েছে। মাথায় একাধিক আঘাত থাকায় তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসক জানান, তিনি এখনও অচেতন এবং শঙ্কামুক্ত নন। ৭২ ঘণ্টা পার না হওয়া পর্যন্ত তার অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। স্বজননা জানান, মিতাকে এখনো ছেলের মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়নি।
শুক্রবার সকালে মা-ছেলে বংশালের কসাইটুলিতে একটি মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঠিক তখনই ভূমিকম্পে ভবনগুলো কাঁপতে শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে ওপরের তলার রেলিং ভেঙে রাফিউলের ওপর পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার বাদ জোহর বগুড়ার সেউজগাড়ী সেন্ট্রাল হাই স্কুল মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন শতাধিক মানুষ, এলাকাবাসী, সহপাঠী, শিক্ষক, আত্মীয়, স্বজন ও বিভিন্ন শ্রেণি,পেশার মানুষ। জানাজা শেষে তাকে বগুড়ার নামাজগড় আঞ্জুমান-ই-মফিদুল কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও, দাফন এখনও অপেক্ষমাণ
রাফিউলের বাবা ওসমান গনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার রাফিকে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলাম, এত তাড়াতাড়ি চলে গেল কেন?
সহপাঠীরা জানান, রাফিউল ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, শান্ত স্বভাবের এবং ভদ্র একজন তরুণ। রাফিউলের বন্ধু আবির বলেন,
রাফি সবসময় বলত, ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করব। পড়াশোনা ছাড়া তাকে কোনো কাজে দেখিনি।
গোয়াইল রোডের বাসিন্দা মাহবুব হাসান বলেন, এতো ভালো একটি ছেলে এভাবে চলে যাবে ভাবাই যায় না। এখন নিজের সন্তানদের দিকেও ভয় নিয়ে তাকাতে হয়।
নিহত রাফিউলের চাচা আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা এই গভীর শোক কিভাবে কাটাব বুঝতে পারছি না, বেলা সাড়ে ১১টায় তার মরদেহ আনা হয়, সঙ্গে তার মাকেও আনা হয়েছে। তার মাকে হাসপাতালে রেখে রাফিউলের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। এখন তার মাকে একনজর দেখানোর জন্য দাফনে দেরি করা হচ্ছে। তার মা এখনো অচেতন অবস্থায় রয়েছে।
আব্দুল মোমিন/আরকে