বিয়েবাড়িতে গান বাজানোয় সালিসে তিনজনকে বেত্রাঘাত

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে সাউন্ড বক্সে গান বাজানোকে কেন্দ্র করে সালিস ডেকে কনের বাবা, মা ও ভাইকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে কনের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। ঘটনাটি ঘটে গত ২০ অক্টোবর হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নে।
জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় কনের ভগ্নিপতির অটোরিকশা আটকে রাখা হয়েছিল। এ অটোরিকশা আটকে রাখার সূত্রে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। পরে স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীর মধ্যস্থতায় অটোরিকশাটি ফেরত দেওয়া হয়।
কনের পরিবারের দাবি, বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল ২০ অক্টোবর। আগের রাতে তারা রাত ১০টা পর্যন্ত সাউন্ড বক্সে গান বাজান। এ নিয়ে স্থানীয় যুবদলের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আফছার উদ্দিন আপত্তি জানান ও কৈফিয়ত চান। এতে কনের ভাইয়ের সঙ্গে তার কথা–কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। পরদিন রাতেই আফছার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে কনের বাড়িতে সালিস বসিয়ে তিনজনকে ১০টা করে বেত্রাঘাত করা হয় এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়।
কনের ভাই বলেন, একটি সাধারণ অনুষ্ঠানের কারণে আমাদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। সালিস ডেকে প্রকাশ্যে আমাদের মারধর করা হয়েছে। আমরা সেখানে নিরুপায় ছিলাম। আল্লাহ ছাড়া আমাদের কেউ নাই।
অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদল নেতা আফছার উদ্দিন বলেন, আমি মাছ বিক্রির ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। বাড়ির সামনে কনের ভাইয়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় আমার সেই ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। এরপর স্থানীয় নেতাদের জানালে সালিস বসে। তবে বেত্রাঘাতের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সালিস পরিচালনা করেন উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও পল্লিচিকিৎসক মো. তছলিম উদ্দিন এবং স্থানীয় বাসিন্দা আলা উদ্দিন মাঝি। কনের পরিবারের অভিযোগ, তছলিম উদ্দিনই বেত্রাঘাত করেন। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আলাউদ্দিন মাঝি জরিমানার বিষয়টি স্বীকার করলেও বেত্রাঘাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন। স্থানীয়ভাবে সালিসের নামে এ ধরনের শাস্তি দেওয়ার ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় যুবক রায়হান মিজি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গান বাজানো নিয়ে বিরোধ হতেই পারে, কিন্তু তার সমাধান বেত্রাঘাত নয়— এ কথা সবাই জানে। তারপরও সালিস ডাকলে মানুষ ভয়ে কিছু বলতে পারে না। এই ধরনের সালিস আসলে শক্তি প্রদর্শনের জায়গা হয়ে গেছে, বিচার নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চরম হতচকিত অবস্থা তৈরি হয়েছে। একটা বিয়েবাড়ির আনন্দ থেকে এমন মারধর আর জরিমানায় কেউই স্বস্তিতে নেই। সালিসের নামে প্রকাশ্যে মানুষ মারধর করা খুবই অন্যায়।
আরেক স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তি আবদুল হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিয়েবাড়িতে গান-বাজনার কারণে এত বড় শাস্তি হওয়া ঠিক হয়নি। যেকোনো অভিযোগ থাকলে থানায় জানানো যেত। সালিসের নামে বেত্রাঘাত করা গ্রাম্য রীতি নয়— এটা আইনেরও লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে আমি জেনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসিব আল আমিন/আরএআর