সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নতুন কমিটি থেকে ৯ জনের পদত্যাগ

সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না যেতেই শুরু হয়েছে পদত্যাগের হিড়িক। সদ্য ঘোষিত জেলা কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নেতৃবৃন্দ একে একে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ৯ জন পদত্যাগ করেছেন।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি সিরাজগঞ্জের ২০৪ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করে তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করে। এই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান মো. মুনতাছির হাসান মেহেদী, সদস্য সচিব মাসুদ রানা, মুখ্য সংগঠক সালমান জোয়ারদার ও মুখপাত্র হন রাজিয়া ভূইঁয়া রাজিতা। কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশিদ, মুখ্য সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি প্রকাশ করা হয়।
নতুন কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ পেতে শুরু করে। শনিবার (২৯ নভেম্বর) গভীর রাত থেকেই একে একে ফেসবুকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন জেলা ও সদর উপজেলা শাখার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, যারা নতুন কমিটিতে উল্লেখযোগ্য দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
যারা পদত্যাগ করেছেন- সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াসির আরাফাত ইশান, যুগ্ম আহ্বায়ক আসির ইন্তেসার অয়ন, টিএম মুশফিক সাদ, রাহাত তালুকদার, সাদমান জাহিন, আধাম আদৃত, সংগঠক যুবায়ের আল ইসলাম সেজান, সিনিয়র সহ-মুখপাত্র সাদিয়া আহমেদ সিনহা ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আঞ্জারুল ইসলাম।
এরা সবাই নতুন কমিটিতে পাওয়া পদ থেকে পদত্যাগ করার পাশাপাশি পূর্বের উপজেলা পর্যায়ের পদ থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এই তালিকা আরও বড় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগ করা সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ইয়াসির আরাফাত ইশান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের না জানিয়েই এই কমিটি করা হয়েছে। কোনো উপজেলাকেই কিছু জানানো হয়নি। এই কমিটির একজন ছাত্রই না, সে চাকরি করে। মেধাবী ছাত্রদের সংগঠনে অশিক্ষিতদের স্থান দেওয়াতেই আমরা পদত্যাগ করেছি।
যুগ্ম আহ্বায়ক আধাম আদৃত ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আগে কোনো জেলা বা উপজেলা বা থানা কোনো কমিটিতে ছিলাম না, থাকার ইচ্ছেও ছিল না, এখনো নেই। আমাকে না জানিয়েই আমার নাম দেওয়া হয়েছে।
সংগঠক পদ থেকে পদত্যাগ করা যুবায়ের আল ইসলাম সেজান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আহ্বায়ক কমিটি না দিয়ে সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন করার কথা ছিল। আমাদের প্রার্থী হতে বলা হয়েছিল। আমাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রায় ২০৪ সদস্য কমিটির প্রায় ১০০ জন আজ ও কালকের মধ্যে পদত্যাগ করে ফেলবে।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হলেও বঞ্চিতদের টানা আন্দোলনের মুখে দুইদিন পর ১০ ফেব্রুয়ারি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। পরে ২৭ জুলাই দেশের সব কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া অন্য কোনো শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ২ নভেম্বর স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে সারাদেশে নতুন কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
নতুন কমিটির আহ্বায়ক মুনতাছির হাসান মেহেদী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তারা (পদত্যাগকারীর) পদ পায়নি। আমাদের সাথে মেশার কারণে অনেককে আগের বার পদেই রাখেনি, এবার ওদের ভালো পদে রাখা হয়েছে৷ এনসিপির মনমতো হয়নি, তাই এদেরকে দিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে বলছে। সিরাজগঞ্জেও এনসিপির কয়েকজন প্রার্থী আছে, এজন্য এই দুর্দশা। ১০০ জনের মধ্যে ৫০ জন দুর্নাম করবে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু দুর্নাম করছে ৫-৭ জন।
নাজমুল হাসান/আরএআর