মেহেদীর রঙ না শুকাতেই নববধূ বিধবা

ইলমা খাতুনকে দেখতে গিয়ে বিয়ে করেন আলাউদ্দিন ইসলাম টগর (৩৫)। বিয়ের চার দিনের মাথায় চলন্ত বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে টগরকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে বাসের স্টাফদের বিরুদ্ধে। তরতাজা এই যুবকের মৃত্যু মেনে নিতে পাড়ছেন না স্বজনরা। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শেষ বিদায় বেলায় টগরের বাড়ির সামনে এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
শেষ বারের জন্য নিহত স্বামী টগরকে দেখতে স্বজনদের কাঁধে ভর করে খাটলির (মরদেহ বহনের খাটলা) সামনে আসেন নববধূ ইলমা খাতুন। এ সময় ইলমাকে উদ্দেশ্যে করে নিহতের ভাই বলেন, ‘তুমি টগরকে মাফ করে দাও। মাফ করে দিলা টগরকে?’ এমন কথা শুনে আরও কান্নায় ভেঙে পড়েন নববধূ ইলমা। তার কান্না দেখে স্বজনরাও কাঁদতে থাকেন।
নিহত টগর পবা উপজেলার হরিপুরের কুলপাড়ার আবু সাইদের ছেলে। তিনি কৃষি কাজ করতেন।
এর আগে রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহী নগরীর লিলিহলের বাঁশের আড্ডা এলাকায় বোনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী বাসে তুলে দিতে আসেন টগর। তার বোন রুমি যাবেন গোদাগাড়ীতে। এ সময় একটি বাস আসে। বাসের হেলপার টগরকে জানান- বাসে সিট আছে। কিন্তু টগর ও তার বোন রুমি বাসে উঠে দেখেন সিট নেই। এ নিয়ে টগরের সঙ্গে বাসের হেলপার ও সুপারভাইজারের বাকবিতাণ্ডার ঘটনা ঘটে।
টগরের স্বজনদের দাবি- বাস চলন্ত অবস্থায় টগরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলে তিনি আহত হন। সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আট নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে কুলপাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মরদেহের পাশে টগরের বাবা আবু সাইদ, মা ও ভাই-বোনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের সঙ্গে কান্না করছেন স্বজনরাও। এর কিছুক্ষণ পরে টগরের মরদেহ শান্তিনগর কবরস্থানে দাফনের জন্য রওনা হন এলাকার মুসল্লিরা। শেষ বিদায়ে স্বজনদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ। সেখানে বাদ আসর দাফন করা হয়। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে এলাকার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
টগরের বন্ধু সাইদুর রহমান বলেন, আচার-ব্যবহার খুবই ভালো ছিল তার। এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। গেল ২৬ নভেম্বর দারুশার তেতলাডাঙ্গায় মেয়ে দেখতে গিয়ে পছন্দ হলে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের রাতে বউ নিয়ে বাসায় আসে। তখন আমরা দেখতে যাই। আমরা ভাবতেই পারিনি যে এমনভাবে সে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে।
জয়া নামের এক নারী বলেন, পাশের গ্রামে আমাদের বাড়ি। সড়কের পাশে অনেক মানুষ দেখে নামলাম। ছেলেটার বিয়ে বয়স এক সপ্তাহও হয়নি। তার আগে মারা গেছে। মেয়েটার হাতের মেহেদীর রঙ এখনো শুকায়নি। তার আগেই বিধবা হয়ে গেলে। আসলে মৃত্যু সবাইকে পর করে দেয়।
নিহত টগরের চাচাতো ভাই আল আমীন ভুলু বলেন, বিয়ের চার দিনের মাথায় ছেলেটা আমাদের ছেড়ে চলে গেল। এটা আসলে দুই পরিবারের কেউই মেনে নিতে পারছেন না। সবাই তাদের জন্য আপসোস করছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, ওই ব্যক্তি একটা মেয়েকে বাসে তুলে দেয়। তিনি বাস থেকে নামতে চাইলে হেলপার তাকে জানায়, এটা টাইমের গাড়ি, আপনাকে সামনে নামিয়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে ওই ব্যক্তি হেলপারকে মারধর করে। এ সময় হেলপার বলে- আপনি আমাকে মারলেন। সামনে কাশিয়াডাঙ্গায় আমাদের মাস্টার আছে সেখানে চলেন। এ সময় ওই লোক বাস থেকে লাফ দেয়। পরে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে শুনেছি। যে ঘটনাটা ঘটেছে এটা আসলে কারও কাম্য না। আসলে এমন ঘটনা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী বলেন, নিহতের ভাই দুলাল হোসেন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। বাসের চালক ও হেলপার পলাতক রয়েছেন। আর বাসটি জব্দ করা হয়েছে।
শাহিনুল আশিক/আরএআর