পরীক্ষা দিতে এসে মাঠে খেলাধুলায় মগ্ন পরীক্ষার্থীরা

রুটিন অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে ‘সমাজ বিজ্ঞান ও প্রাথমিক বিজ্ঞান (সমন্বিত)’ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকার পরও শিক্ষকদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু হয়নি। তাই স্কুলের মাঠে খেলাধুলা করে সময় কাটছে পরীক্ষার্থীদের।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে রাজশাহী নগরে বুধপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির কারণে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকদেরও অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষকরা জানান, সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করা, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির ব্যবস্থা করা- এমন তিন দফা দাবিতে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ফলে আজকের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না।
তবে একইদিন দুপুর দেড়টা থেকে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচিতি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, দুপুরে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষাটি হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজে পরীক্ষা নিয়েছেন।
জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ১ হাজার ৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। রাজশাহী জেলা শিক্ষক নেতারা বলছেন, শাটডাউন কর্মসূচি জেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পালন করা হচ্ছে। ফলে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না।
সকালে পরীক্ষা দিতে এসে শিক্ষার্থী তাওহীদ বলেন, পরীক্ষা মনে হয় হবে না। স্যার (শিক্ষক) পরীক্ষা নিচ্ছে না। তাই আমরা মাঠে সবার সঙ্গে খেলছি।
সকালে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, তাদের কারও সন্তান ক্লাস ওয়ান ও ক্লাস টুতে পড়ে না। আজ সকাল ১০টা থেকে তাদের সমাজ বিজ্ঞান ও প্রাথমিক বিজ্ঞান (সমন্বিত) পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষা নিচ্ছে না শিক্ষকরা। তারা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার রুমে ঢুকতে দেয়নি। স্কুল মাঠে তারা খেলাধুলা করছে। ১০টা বেজে পার হয়ে গেছে, তবুও পরীক্ষার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলটির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘সমাজ বিজ্ঞান ও প্রাথমিক বিজ্ঞান (সমন্বিত)’ পরীক্ষা ছিল। তবে শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলাধুলা করছে। এছাড়া মাঠের একপাশে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের বসে থাকতে দেখা গেছে। তারাদের সন্তানদের পরীক্ষা হবে, কি হবে না, সে বিষয় তেমন কিছু জানানো হয়নি। তবে স্কুলটির অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাশেদা খাতুন বলেন, আজ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সমাজ বিজ্ঞান ও প্রাথমিক বিজ্ঞান (সমন্বিত)' পরীক্ষা ছিল। সকাল দশটায় পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীরা এসেছে, তারা মাঠে খেলাধুলা করছে। আসলে এতগুলো শিক্ষার্থীর এভাবে একা পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না। চাচ্ছি পরীক্ষা হোক। কিন্তু পরীক্ষার বিষয়ে তেমন সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া আজকের পরীক্ষা 'মৌখিক'।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে কোনো অগ্রগতি নেই। আমাদের দুজন শিক্ষক নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কোনো ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। আজকে যেহেতু পরীক্ষা আছে, শিক্ষার্থীরা আসবে তাদেরকে আমরা বাড়িতে পাঠিয়ে দেব। আমাদের বিষয়ে পজেটিভ কোন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি পালন করব।
শিক্ষকদের অভিযোগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষিত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি ২২ দিন ধরে ঝুলে আছে। দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় আজ বুধবার থেকে পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আনোয়ার হোসেন বলেন, ১ হাজার ৫৭টি রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আমরাও লোকজন পাঠিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিজিট করে দেখছি। শিক্ষকরা তাদের কর্মসূচি পালন করছে। এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
শাহিনুল আশিক/আরকে