শিক্ষকদের শাটডাউনে শ্রেণিকক্ষে তালা, বাইরে অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা

লাগাতার কর্মবিরতি ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি তিনদফা দাবি বাস্তবায়নে তৃতীয় দিনে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন ময়মনসিংহের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এ নিয়ে শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষকরা যখন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে, তখন বিদ্যালয়ের বারান্দায় বা মাঠে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে নগরীর শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। এ সময় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে তারা আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ময়মনসিংহের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
এর মধ্যে দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনে তারা পরীক্ষা দিতে পারছে না।
এ সময় দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা মেহের বলেন, আজকে আমাদের বাংলা পরীক্ষা ছিল। কিন্তু ম্যাডামদের কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা হচ্ছে না। ক্লাস রুমেও তালা, তাই বসে আছি। মা আসলেই বাসায় চলে যাব।
প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়ন্তী মনি বলেন, পরীক্ষা না হওয়ায় বসে রয়েছি, ম্যাডামরা ক্লাসে আসছে না। মা আমাকে রেখে বাসায় চলে যাওয়ায় আমি যেতেও পারছি না।
কর্মসূচি পালনের সত্যতা স্বীকার করে শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল নাহার বলেন, আমাদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির দাবিতে আমরা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছি। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে, তবে দাবি মেনে নিলেই আমরা ক্লাসে ফিরবো।
নগরীর সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাদিজাতুল কোবরা বলেন, আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা দাবির পক্ষে অনড়।
গোহাইলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সারমিন সুলতানা বলেন, আমাদের কর্মবিরতির কারণে শ্রেণিকক্ষে তালা থাকায় ছাত্ররা এসে ঘুরে যাচ্ছে। আমাদের কর্মসূচি চলবে।
শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিপি মনিকর বলেন, সহকারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করায় একা পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে কর্মবিরতি প্রত্যাহার হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া হবে।
জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু ইউসুফ বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে বিষয়টি সামাধানে আলোচনা চলছে। আশা করছি আগামীকাল থেকে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে পড়বে। আবারও শিক্ষার্থীদের পদাচারণায় প্রাণ ফিরেবে বিদ্যালয়গুলোতে।
প্রসঙ্গত, ময়মনসিংহ জেলায় ২১৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ৫ লাখ শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১৩ হাজার শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরকে