৫ ঘণ্টার মুক্তিতে মায়ের জানাজায় অংশ নিয়ে নতুন পৃথিবী দেখলেন সেলিম

অন্যসব দিনগুলোর তুলনায় হত্যা মামলায় ২৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সেলিম কাজীর (৭৪) জন্য আজকের দিনটি একটু ভিন্ন রকম। চারদিকে মুক্ত হাওয়া, সেই চিরচেনা বাড়ির আঙিনা আজ তার চোখের সামনে। যেখানে মায়ের সাথে কেটেছে তার শৈশব ও কৈশোর। কিন্তু চেনা বাড়িটিও আজ যেন তার কাছে বড্ড অচেনা। বাড়ির আঙিনায় লাগানো নারকেল গাছ, ফলের গাছগুলোও ২১ বছরে অনেক বড় হয়ে গেছে। বহুদিন পর বাড়িতে ফিরে সবকিছুই একবার কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখেছেন তিনি। কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখলেও এর মধ্যে কী যেন নেই, একরাশ শূন্যতা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে।
কারণ তার গর্ভধারিণী মা আর বেঁচে নেই। মূলত এত শত আয়োজন, প্যারোলে মুক্তি, একটু খোলা হাওয়া সবই যে তার মায়ের জন্য। গতকাল মঙ্গলবার রাতে মা রেনু বেগম চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার জানাজায় অংশগ্রহণের জন্যই তাকে আজ কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দিয়েছেন আদালত।
জানা যায়, একটি হত্যা মামলায় ২৫ বছরের সাজা হয় সেলিমের। ইতোমধ্যে ২১ বছর ধরে যশোর কারাগারে সাজা ভোগ করছেন তিনি। মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১১টায় তার মা রেনু বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মায়ের জানাজায় অংশগ্রহণে সুযোগ দেওয়ার জন্য আদালতে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন সেলিমের পরিবার। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তাকে কয়েক ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেন। পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের একটি টিম তাকে নিরাপত্তার বলয়ে সেখানে নিয়ে আসেন।মায়ের জানাজায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন সেলিম।
বুধবার দুপুর ২টায় জিয়া সড়কের স্থানীয় মসজিদের সামনে সেলিমের মা রেনু বেগমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সেলিম কাজীর অন্যান্য স্বজনরাও। এসময় জানাজাস্থলে তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। জানাজা শেষে তাকে আবারও নিয়ে যাওয়া হয় পটুয়াখালী জেলা কারাগারে।
সেলিম কাজী পটুয়াখালী সদর উপজেলার পৌরসভাধীন টাউন বহালগাছিয়া এলাকার জিয়া সড়কের বাসিন্দা লতিফ কাজীর ছেলে।
সেলিমের স্বজনরা জানান, এত বছর পর তিনি কাছ থেকে নিজ বাড়ি দেখতে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছেন। তার মায়ের জন্য বার বার ফুপিয়ে কাঁদছেন। আমরাও এত বছর পর তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেলাম।
পটুয়াখালী জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একটি সিআর মামলায় বরিশালের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের রায়ে সেলিম কাজীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।এর আগে তিনি যশোর কারাগারে ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি পটুয়াখালী জেলা কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।
পটুয়াখালী জেলা কারাগারের জেলার মো. আব্দুর রব মিয়া জানান, আদালতের নির্দেশনায় সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেলিম কাজীকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। জেলা পুলিশের একটি টিম তাকে সেখানে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ বলেন, আমরা আদালতের চিঠি পেয়ে আজ সকালে পুলিশের টিমসহ তাকে জানাজায় পাঠিয়েছি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
প্যারোলে মুক্তি হলো একটি আইনি ব্যবস্থা যেখানে একজন সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দীকে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে সাময়িকভাবে কারাগারের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
এমএএস