ছাত্র হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে, নিরাপত্তা শঙ্কায় বাবা-মা

ছুটিতে বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে আর ফেরেননি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী নাফিউল করিম সোহান (২৩)। রাতে খাবার খেয়ে ঘুমানোর পরদিন সকালে পাওয়া যায় তার মরদেহ। নাফিউলকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে আদালতে মামলা করেন তার মা। কিন্তু হত্যা মামলার প্রায় পাঁচ মাস হলেও অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উল্টো নাফিউলের পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্তরা। এমন অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন নাফিউলের বাবা-মা।
রোববার (০৭ ডিসেম্বর) দুপুরে পাবনায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান নিহত নাফিউলের বাবা রেজাউল করিম ও মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাসিমা আক্তার।
নাফিউল গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ৪৩ তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নাফিউলের মা নাসিমা আক্তার অভিযোগ করে জানান, বাড়ির সামনে জমি কেনার পর থেকে নাফিউলের চাচা ইব্রাহিম হোসেন, নজরুল ইসলাম এবং চাচাতো ভাইদের সঙ্গে তাদের বিরোধ দেখা দেয় এর জেরে গত ২৪ এপ্রিল ওই জমির মাটি কাটা নিয়ে ঝগড়া বাধায় তারা। সেদিন তারা প্রকাশ্যে সবার সামনে নাফিউলকে হত্যার হুমকি দেন। ৫ জুন ছটিতে বাড়িতে যান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাফিউল। ৮ জুন রাতে খাবার খেয়ে ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। পরদিন ৯ জুন সকালে ঘুম থেকে ওঠে ছেলের মরদেহ দেখতে পান তার বাবা-মা।
নাফিউলের বাবা-মায়ের দাবি, ‘আগের বিরোধের জেরে ৮ জুন রাতের কোনো এক সময় নাফিউলকে তার চাচা ও চাচাতো ভাইরেরা মিলে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে।’
নাফিউলের বাবা-মায়ের অভিযোগ, নাফিউলকে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে মৃত ঘোষণা করার পর তারা ছেলেকে ঢাকার গণবিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল হাসপাতালে নিতে চান। কিন্তু অভিযুক্তপক্ষের লোকজন লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অভিযুক্ত চাচা ও চাচাতো ভাইয়েরা নিজেরাই পরিবারের অনুমতি ছাড়াই মরদেহ গোসল করায় এবং তড়িঘড়ি করে জানাজা দাফন সম্পন্ন করেন। তারা অন্যদের কারও কোনো কথা শোনেনি।
তারা আরও অভিযোগ করেছেন, হুমকি-চাপ উপেক্ষা করে থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা নেয়নি। তারা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। নাফিউলের মৃত্যুর প্রায় দুই মাস পর ৪ আগস্ট নাফিউলের মা নাসিমা আক্তার বাদী হয়ে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নাফিউলের চাচা ইব্রাহিম হোসেন, নজরুল ইসলাম, চাচাতো ভাইসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়।
নাফিউলের বাবা-মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মামলার পরও অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও দেখছে না তারা। উল্টো নানাভাবে আমাদের হয়রানি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে।
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে অবিলম্বে ছেলে হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ন্যায় বিচার দাবি করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিউল আযম বলেন, ‘প্রথমে নাফিউল এর স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে তারা দাফন কাফন করেছিলেন। ওই সময় থানায় কোনো জিডি বা মামলা করেননি তারা। সম্প্রতি আদালতে একটি মামলা করেছেন। সেই মামলার পঞ্চম আদেশে গত থানায় মামলা করে তদন্তের আদেশ দেন আদালত। আমরা গত ৫ ডিসেম্বর মামলা রুজু করেছি। তদন্ত চলছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘তদন্তের জন্য লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করতে হবে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বোঝা যাবে নাফিউলের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে। পুলিশ আসামি ধরছে না এ কথা ঠিক নয়। কারণ থানায় তো তারা মামলা করেননি। আদালতের আদেশে মামলা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার প্রধান অভিযুক্ত ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘এলাকার সব মানুষ জানে ছেলেটা মারা যাওয়ার পর তারা নিজেরাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। সেখান থেকে ঘুরে এসে এলাকার মানুষজনই দাফন কাফন করেছে। এখন হঠাৎ করে যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটা মিথ্যা। ছেলেটা কিভাবে মারা গেছে আমরা নিজেরাও জানি না। এর আগে পুলিশ এসে একবার সব জেনেশুনে গেছে। আদালতে মামলা করেছে বলে শুনেছি।’
রাকিব হাসনাত/এমটিআই