প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরেও নির্মাণ হয়নি ছাত্রাবাস, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

বরগুনায় প্রায় ১৯ বছর আগে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য এখনও নির্মাণ করা হয়নি ছাত্রাবাস। ফলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়েই থাকছে হচ্ছে ভাড়া বাসায় অথবা স্থানীয় বাসিন্দাদের তৈরি করা বিভিন্ন ছাত্রাবাসে।
এতে একদিকে যেমন বাড়তি খরচ এবং খাবারের ভোগান্তি রয়েছে পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি কলেজের নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ করা যাচ্ছে না ছাত্রাবাস।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত এ কলেজ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে কলেজের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা আছে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থীই দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন। আর এ কারণে নিয়মিত ক্লাস এবং প্রাইভেট পড়তে তাদের বরগুনায় থাকতে হচ্ছে। তবে কলেজের নিজস্ব কোনো ছাত্রাবাস না থাকায় ভাড়া বাসায় অথবা স্থানীয় বাসিন্দাদের তৈরি করা বিভিন্ন ছাত্রাবাসেই থাকতে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিনে শিক্ষার্থীদের থাকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ক্রোক, ডিকেপি রোড, ঢলুয়া এবং পোটকাখালী নামক এলাকার স্থানীয় অনেক বাসিন্দারা শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য ছাত্রাবাস তৈরি করেছেন। মাসিক ভাড়া চুক্তিতে এ সব আবাসনে থাকছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তবে দূর থেকে আসায় এবং স্থানীয়ভাবে কেউ পরিচিত না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, অনেক সময় ভাড়া বাসায় গিয়ে হামলা, মারধর, মোবাইল ল্যাপটপ ছিনতাইসহ মাদকেরও আড্ডা বসায় স্থানীয় বখাটে ও মাদকাসক্তরা। ফলে নির্যাতন আর নিরাপত্তাহীনতায় শিক্ষাজীবন পার করতে হয় বিভিন্ন ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের।
ফরিদপুর থেকে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিভিল বিভাগে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী সুজয় বিশ্বাস থাকেন স্থানীয়ভাবে নির্মিত নায়েব ছাত্রাবাসে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নিজস্ব কোনো ছাত্রাবাস নেই। যদি থাকতো তাহলে আমরা পড়াশোনার জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধা পেতাম। এখন আমাদের থাকার জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় মাসিক ঘর ভাড়া এবং খাবার খরচ মিলিয়ে বড়তি টাকা খরচ করে থাকতে হয়। এ কারণে সব খরচ দিয়ে আমাদের পড়াশোনা চালাতে কষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া, দূর থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থীর সামর্থ না থাকায় বরগুনায় থেকে তাদের পড়াশোনা করতে কষ্ট হয়ে যায়।
একই ছাত্রাবাসে থাকা সিভিল বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মো. আরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নিজস্ব ছাত্রাবাস না থাকায় আমাদের ভাড়া করে ম্যাসে থাকতে হচ্ছে। অনেক সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে চলাফেরা করতে গিয়ে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়। বাড়ি থেকে আসার পরে যদি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাস পেতাম তাহলে আমাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হতো না।

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের শিক্ষার্থী মোসা. মরিয়ম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কলেজে ছেলে-মেয়েদের জন্য কোনো ধরনের ছাত্রাবাসের ব্যবস্থা না থাকায় মেয়েদেরকে ফ্যামিলি বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। বিভিন্ন প্রয়োজনে নানা সময়ে কলেজে আসা-যাওয়া করতে গেলে ওইসব বাড়ির মানুষজন তা ভালো চোখে দেখে না। এ ছাড়া, অনেক কিছু মানিয়ে তারপর ফ্যামিলি বাসায় মেয়েদের ভাড়া থাকতে হয়। যদি আমাদের কলেজের একটি ছাত্রাবাস থাকতো তাহলে যখনই ক্লাস থাকতো তখনই আমরা বের হতে পারতাম। আমাদের মেয়েদের স্বাধীনতা থাকতো। অভিভাবকরা আমাদের নিয়ে নিশ্চিত থাকতো, তারা জানতেন কলেজের স্যারদের তত্ত্বাবধানে অন্য মেয়েদের সঙ্গে মেয়েরা নিরাপদে আছে।
কলেজের নিজস্ব ছাত্রাবাস না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অসুবিধার বিষয়ে জানিয়ে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এনভায়রনমেন্ট বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মো. মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কলেজে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই দূরদূরান্ত থেকে পড়াশোনার সুযোগ পায়। এসব শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মেয়েদের জন্যও কলেজে থাকার কোনো হল না থাকায় বাইরে যে কোনো জায়গায় বাসা ভাড়া করে থাকতে হয়। তবে অনেক সময় তারা ওই সব বাসায় নিজেদের নিরাপদ মনে না করায় পড়ালেখা সম্পন্ন করতে পারে না। শুধু কলেজের নিজস্ব কোনো থাকার ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে।

বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিল চন্দ্র কির্তুনিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০০৬ সালে বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই দেশের উত্তর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পড়াশোনা করতে আসে। কলেজের নিজস্ব কোনো আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় শহরের বিভিন্ন এলাকার ম্যাস ভাড়া করে থাকতে হয় তাদের। এ কারণে শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। তবে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ আমাদের কাছে তথ্য চেয়েছিল। আমরা জমি এবং স্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছি। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে কলেজের ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমে যাবে।
প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরেও কলেজের ছাত্রাবাস নির্মাণ না করার বিষয়ে বরগুনার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ঈসা মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা বাংলাদেশ থেকেই বরগুনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে আসেন। দূরদূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে গত তিন বছর আগে কলেজ পরিদর্শন এবং কাজের প্ল্যান করা হয়েছিল। তবে সমস্যা হচ্ছে ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য কলেজের কোনো জমি নেই। এবং প্রকল্পের অধীনে জমি অধিগ্রহণের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ নেই। যদি অর্থ বরাদ্দ হয় তাহলে ছেলে এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আলাদা আবাসন নির্মাণ করা হবে।
জেলা প্রতিনিধি/এএমকে