চুয়াডাঙ্গায় আরও ৭ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১৬

চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় একজন করোনায় এবং ছয়জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ সময় নতুন করে আরও ১১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যা জেলায় এক দিনে শনাক্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) রাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএস এম ফাতেহ আকরাম।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট ও কুষ্টিয়া আরটিপিসিআর ল্যাব থেকে ২৩২টি নমুনার ফলাফলে ১১৬ জনের শনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৯৫৩ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সদরে ৬১, দামুড়হুদায় ১২, আলমডাঙ্গায় ১৪ এবং জীবননগরে ২৯ জন রয়েছেন।
এর আগে বুধবার (২৩ জুন) রাতে ৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সবাই করোনা পজিটিভ বলে তথ্য দিয়েছিল জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) বিকেলে শতভাগ করোনা শনাক্তের তথ্য সঠিক নয় বলে জানান জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। এ দিন দুপুরে শনাক্তের হার শতভাগ বলে যে তথ্য সিভিল সার্জন কার্যালয় দিয়েছিল সেটি সঠিক নয় জানিয়ে দুপুরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন খোদ চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. এএসএম মারুফ হাসান।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার থেকে চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর বিষয়ে সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার বিষয়ে সিভিল সার্জন কঠোরতা আরোপ করে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ভোকাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। যদিও আরএমও গতকাল জেলায় কতজন শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে সে তথ্য জানিয়েছেন। তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে সিভিল সার্জনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গায় নতুন ১১৬ জন করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছেন। বিস্তারিত বলবেন জেলা করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ভোকালপার্সন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার।
এরপর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ছয়জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১১৬ জন।
তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গা সদরের তিতুদহ গ্রামের মৃত সুরত আলীর ছেলে দরবেশ আলী (৭০) জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভুগছিলেন। গত ১৪ জুন তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় ২৪ জুন তার করোনা শনাক্ত হয়। পরে করোনা ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডে হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার ছয়জন করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এদের সবার নমুনা সংগ্রহ করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মোট ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় ৮২ জনের ও জেলার বাইরে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা, সদরের আলুকদিয়া ইউনিয়ন, দামুড়হুদা এবং জীবননগর উপজেলায় কঠোর লকডাউন চলছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লকডাউন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
এ সময় জেলায় ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১০১ মামলায় ১১৪ জনকে ৯২ হাজার ৪৮০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একজনকে পাঁচ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একটি টেলিভিশন এবং ৩২টি ইজিবাইক জব্দ করা হয়েছে।
আফজালুল হক/এসপি