ঝালকাঠি-১ আসনে এনসিপির প্রার্থী ডা. মিতু

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর–কাঁঠালিয়া) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. মাহমুদা আলম মিতু। বুধবার ১০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
ডা. মাহমুদা মিতুর বাবার বাড়ি ঝালকাঠি-১ আসনের কাঁঠালিয়ার শৌলজালিয়ার দক্ষিণ কৈখালী। দাদা আমজাদ হোসেন তিনবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। শৈশব থেকেই তিনি মনে লালন করে এসেছেন— যদি কখনো নির্বাচনে আসেন, তবে এ আসন থেকেই মানুষের সেবা করবেন। এনসিপির মনোনয়ন পাওয়ার আগে থেকেই তিনি এ অঞ্চলে তরুণদের কর্মসংস্থান, নারীর নিরাপত্তা, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবাকে কেন্দ্র করে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। চিকিৎসক হিসেবে তার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, জরুরি চিকিৎসাসেবা এবং কমিউনিটি হেলথ সেন্টারকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার, সড়ক যোগাযোগ উন্নয়ন ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সহায়তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন মিতু। তার ভাষায়— ঝালকাঠি-১ হবে একটি সুস্থ, শিক্ষিত ও নিরাপদ মানবিক এলাকা।
রাজনীতিতে আসা ডা. মাহমুদা মিতুর জীবনে কোনো পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত ছিল না বলে তিনি জানান। সমাজসেবা কাজের অংশ হিসেবে ‘কেয়ার অব মিতু’র মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি। কিন্তু একদিন হঠাৎ এনসিপির সামান্তা ও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ফোন তার জীবনে নতুন মোড় এনে দেন। তারা তার কাজ ও মানবিক উদ্যোগের কথা জেনে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। রাজনীতিতে সরাসরি পদচারণার আগেও তিনি দশ বছর ধরে স্বামীকে মজার ছলে বলতেন— একদিন নির্বাচনে অংশ নেবেন। দাদার রেখে যাওয়া কথাও তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। দাদা মৃত্যুর আগে বলেছিলেন, “ওমুক লোক আমার চেয়ারম্যান পদবি নিয়ে গিয়েছিল, তোমরা একদিন আমার দেখানো পথে হাঁটবে।” মিতুর বিশ্বাস, সেই কথাই তাকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর ৮ আগস্ট লিখেছিলাম— একদিন এই সংসদ ভবনে আমিও যাব। আল্লাহই সব ঠিক করেন।
ডা. মিতুর শৈশব, কৈশোর এবং শিক্ষাজীবনের একটা অংশ কেটেছে বরিশাল ও কাঁঠালিয়াতে। শৌলজালিয়া হাই স্কুলে পড়াশোনা করে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছিলেন তিনি। পরে বেতাগী ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকায় উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে যান। এ সময় বিয়ে হয়ে যায় এবং দুই সন্তানের জন্ম হয়। এরপর গুলশানের শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। দুই ছোট সন্তানের দায়িত্ব সামলে মেডিকেল পড়াশোনা করা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়গুলোর একটি। চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা তার জীবনে আগে কখনো ছিল না, বরং স্বামী ও ননদ চিকিৎসক হওয়ায় এবং শাশুড়ির উৎসাহই তাকে এ পেশায় টেনে আনে। তিনি বলেন, আমিই মনে হয় দেশের একমাত্র মেয়ে, যে শাশুড়ির ইচ্ছায় ডাক্তার হয়েছে।
জুলাই আন্দোলনের সময় সোশ্যাল মিডিয়া ও চিকিৎসক গ্রুপগুলোতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন মিতু। আন্দোলনকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন, চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন এবং সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আন্দোলনের সবচেয়ে ভয়াবহ স্মৃতি তার শাহজাদপুরে দেখা এক মুহূর্ত। সেদিন ১৪৪ ধারা জারি ছিল। রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। হঠাৎ খালি রাস্তায় এপিসির ভেতর থেকে সেনা সদস্য গুলি ছোড়ে। মাত্র পাঁচ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়। এই দৃশ্য তাকে মানসিকভাবে নাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, সেই ঘটনার পর অনেক রাত ঘুমোতে পারিনি। আমি সত্যিই ট্রমার মধ্য দিয়ে গিয়েছি।
শৈশবের স্বপ্ন, পারিবারিক অনুপ্রেরণা, চিকিৎসা পেশার মানবিকতা এবং আন্দোলনের অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে ডা. মাহমুদা মিতু এখন ঝালকাঠি-১ আসনে পরিবর্তনের নতুন মুখ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির ঝালকাঠি জেলা সমন্বয়ক মাইনুল ইসলাম মান্না বলেন, তার কর্মপরিকল্পনা, সামাজিক কাজ এবং একজন মানবিক চিকিৎসক হিসেবে তাকে এ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
শাহীন আলম/আরএআর