আজকের দিনে শত্রুমুক্ত হয় কক্সবাজার

কক্সবাজার শত্রুমুক্ত দিবস আজ (১২ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে কক্সবাজারকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্ত ঘোষণা করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
৫৪ বছর আগে আজকের দিন সকালে শহরের ঐতিহাসিক পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে (বর্তমান শহীদ দৌলত ময়দান) জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। সেদিন চারটি গাড়িযোগে কক্সবাজার শহরে প্রবেশ করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কক্সবাজার-বান্দরবান অঞ্চলের তৎকালীন অধিনায়ক ক্যাপ্টেন আবদুস ছোবহানের নেতৃত্বে তারা শহীদ দৌলত ময়দানে সকাল ১০টায় পতাকা উত্তোলন ও শোডাউনের মাধ্যমে হানাদারমুক্ত কক্সবাজারের ঘোষণা দেন।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে প্রকাশিত 'মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার-বান্দরবান' গ্রন্থে প্রয়াত ক্যাপ্টেন আবদুস ছোবহান সেদিনের স্মৃতিস্মরণে লিখেছেন, ‘উখিয়ার পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্প থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে ১২ ডিসেম্বর খুব সকালে রওনা হয় চারটি বাস। রেডক্রসের একটি সাদা জিপ এবং স্থানীয় কপিল উদ্দিন চৌধুরী ও জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর সহায়তায় যোদ্ধাদের সমন্বিত বহরটি কোটবাজার-মরিচ্যা হয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হয়।’
গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়, ‘মরিচ্যা বাজারে সেদিন ছিল সাপ্তাহিক হাট। রাস্তার দুই পাশে হাজারো মানুষ হাত তুলে স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানান। সম্ভাব্য হানাদার হামলার আশঙ্কায় অস্ত্রের নল বাহিরমুখী রেখেই অগ্রসর হন যোদ্ধারা। শহরে প্রবেশের আগে চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা কক্সবাজারকে ঘিরে ফেলেন। হাশেমিয়া মাদ্রাসা থেকে রাডার স্টেশন, কলাতলী এলাকা থেকে সৈকত এলাকা পর্যন্ত প্রতিটি জায়গায় সেদিন অবস্থান নিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। পরে বর্তমান শহীদ দৌলত ময়দানে জনতার ঢল নামে, উৎসব আর স্বজন-হারানোর কান্নায় তৎকালীন মাঠটি মানুষের 'সমুদ্র' হয়ে ওঠে।’
গ্রন্থে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী সেদিন দেওয়া তার বক্তব্যে ক্যাপ্টেন ছোবহান বলেছিলেন, ‘আপনারা যাদের হারিয়েছেন তাদের জন্য মন খারাপ করবেন না, বরং তাদের নিয়ে গর্ববোধ করুন। তারা স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছেন। তাদেরই রক্তের বিনিময়ে আজ কক্সবাজারমুক্ত।’
তিনি বক্তব্যে স্মরণ করেন, শহীদ ছাত্রনেতা সুভাষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা ফরহাদ, অ্যাডভোকেট জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরীসহ অসংখ্য নির্যাতিত মানুষকে যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।
মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বধ্যভূমিগুলো সংস্কার হয়নি এখনো। নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে না। এসব সংরক্ষণ জরুরি।’
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ. এম. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিজয়ের ৫৪ বছর পরেও কক্সবাজারের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক, বধ্যভূমি ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো যথাযথ সংরক্ষণের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। ১২ ডিসেম্বর এলে কক্সবাজারের মানুষ স্মরণ করে সেই বীরত্বগাথা দিনটিকে, যেদিন বাংলার দামাল ছেলেরা পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজিত করে উপকূলীয় এই শহরকে মুক্ত করেছিল বলে জানান তিনি।
ইফতিয়াজ নুর নিশান/এএমকে