স্ত্রীসহ মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার কারণ জানালেন গ্রেপ্তার যুবক

রংপুরের তারাগঞ্জে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) এবং তার স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে (৬০) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মাত্র আট হাজার টাকা চুরির উদ্দেশ্যে বাসায় ঢুকে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করা এক যুবক এ দম্পতিকে হত্যা করেন।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন এ তথ্য জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ভোরে আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত বালাপাড়া এলাকা থেকে সন্দেহভাজন যুবক মোরছালিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি তারাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী এবং টাইলস মিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোরছালিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ হত্যায় ব্যবহৃত একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোরছালিন হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তার তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে একটি দা উদ্ধার করা হয়েছে। কুড়াল উদ্ধারের কাজ চলছে।
স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, মোরছালিনের আট হাজার টাকার মতো ঋণ ছিল। সেই ঋণ শোধ করতে তিনি যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন। ঘটনার দুই দিন আগে তিনি ওই বাড়িতে টাইলসের কাজ করেছিলেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে তিনি ওই বাড়িতে ঢুকে সঙ্গে আনা কুড়াল দিয়ে প্রথমে সুবর্ণাকে, পরে যোগেশ চন্দ্র রায়কে কুপিয়ে হত্যা করেন। এরপর বাড়ির দা দিয়ে আলমারির তালা ভেঙে টাকা খুঁজলেও কিছু পাননি বলে পুলিশকে জানান। পরে দেয়াল টপকে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুকুরে কুড়ালটি ফেলে দেন।
গত শনিবার গভীর রাতে তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে প্রতিবেশীরা ঘরে ঢুকে দম্পতির রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ছিলেন একজন শিক্ষক। ২০১৭ সালে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অবসরে যান। তার দুই ছেলে- বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় জয়পুরহাটে থাকেন এবং ছোট ছেলে রাজেশ খান্না চন্দ্র রায় ঢাকায় পুলিশে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়িতে শুধু দম্পতি দুজনই থাকতেন।
এ ঘটনায় বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ সেই মামলার অগ্রগতির অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মোরছালিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও পাওয়া গেছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এআরবি