জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপির হামলা, দোকান ভাঙচুর-আহত ১২

দৌলতখান উপজেলার পর এবার ভোলা সদর উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ওপর আবারও হামলার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এ হামলায় জামায়াতের ইউনিয়ন আমির ও সেক্রেটারিসহ অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। একই সময়ে জামায়াত নেতাকর্মীদের চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর ভোলা সদর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে তাদের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দিন সকালে স্থানীয় বিএনপি সমর্থক রিয়াজ ও জামায়াত কর্মী মো. বসারের মধ্যে ফেসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে প্রথমে বাকবিতণ্ডা এবং পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা দুজনকে আলাদা করে পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং রাতে এশার নামাজের পর বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর রাতে জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী ভেলুমিয়া বাজারে একটি দোকানে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় ভেলুমিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ইউনুস কমান্ডার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই কুট্টিসহ বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এসে তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। একই সঙ্গে জামায়াত সমর্থক মমিনের জুতার দোকান, আক্কাসের কাপড়ের দোকান, জাকিরের কাপড়ের দোকান এবং ইসলামী আন্দোলনের সমর্থক আনোয়ার কাজীর কাপড়ের দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। এতে পুরো বাজার এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রাতে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামী ভোলা সদর উপজেলা আমির মাওলানা কামাল হোসেন অভিযোগ করেন, সকালে মহান বিজয় দিবসের মিছিল নিয়ে ফেরার পথে সৃষ্ট বাকবিতণ্ডার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভোলায় জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীরা দুই দফা হামলা চালিয়েছে। সন্ধ্যার পর ভেলুমিয়া বাজারে বিএনপির নেতাকর্মীরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১০ জন জামায়াত নেতাকর্মীকে আহত করে এবং ৪ থেকে ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। হামলার সময় তারা মিছিল নিয়ে রাজাকার স্লোগান দেয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. হেলাল উদ্দিন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ভেলুমিয়া বাজারে বিএনপির একটি মিছিলের পেছন দিক থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। এতে রিয়াজ ও মিলন নামের বিএনপির দুই কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় বিএনপির ওপর চাপিয়ে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে।
এদিকে ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, জামায়াত ও বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নির্দেশ দেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে একই দিন সকালে দৌলতখান উপজেলা স্টেডিয়ামে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথিদের জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় জামায়াতের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। তবে দৌলতখান উপজেলা বিএনপি ও যুবদল এ হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
খাইরুল ইসলাম/এআরবি