মুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ার থেকে তুলে দিলেন মহিলা দলের নেত্রী

কুমিল্লার দেবিদ্বারে মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামকে চেয়ার থেকে তুলে দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি সুফিয়া বেগম ওই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ার থেকে তুলে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় জেলাজুড়ে তীব্র সমালোচনা চলছে।
ভাইরাল হওয়া ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে কয়েকটি চেয়ারে কয়েকজন ব্যক্তি বসে আছেন। তাদের মধ্যেই দেবিদ্বার উপজেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বসে ছিলেন। এ সময় উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি সুফিয়া বেগম হাতের ইশারায় তাকে উঠে যেতে বলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম চারদিকে তাকাতে থাকেন। একপর্যায়ে সুফিয়া বেগম তাকে হাতে ধরে বাম পাশে নিয়ে যান। পুরো ঘটনাটি দূর থেকে কেউ একজন মোবাইল ফোনে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে উপস্থিত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম। এ সময় মহিলা দলের ওই নেত্রী তাকে চেয়ার ছেড়ে দিতে বলেন।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বছরে দুটি বড় অনুষ্ঠান হয়- একটি বিজয় দিবস, অন্যটি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। আমি সকালে গিয়ে দেখি একটি চেয়ার ফাঁকা ছিল। পাশে একজন মহিলা বসা ছিলেন। তিনি আমাকে অনুরোধ করেন ফাঁকা চেয়ারটিতে বসতে। আমি সেখানে বসি। কিছুক্ষণ পর সুফিয়া বেগম এসে আমাকে পেছনের চেয়ারে চলে যেতে বলেন। তিনি বারবার হাত নেড়ে ও উচ্চস্বরে উঠে যেতে বলছিলেন। পরে তিনি আমাকে ধরে অন্য একটি চেয়ারে বসান। উপস্থিত সবাই তখন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। বিষয়টি আমার আত্মসম্মানে লেগেছে। তাই কিছুক্ষণ পরই অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে আসি।
অভিযুক্ত কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি সুফিয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই চেয়ারে আমি নিজেই বসা ছিলাম। এক সাংবাদিক এসে আমাকে বলেন, আপা আসেন, আপনার একটি সাক্ষাৎকার নেব। আমি উঠে সাক্ষাৎকার দিতে যাই। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখি তিনি (বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম) আমার চেয়ারে বসে আছেন। তাই আমি তাকে অন্য একটি চেয়ারে বসতে বলি। তিনি উঠতে চাইছিলেন না। এজন্য আমি তাকে হাতে ধরে অন্য চেয়ারে বসিয়ে দিই।
তিনি আরও বলেন, একটি দুষ্টচক্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিডিওটি ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি তো তাকে পরে নিজ হাতে অন্য একটি চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছি, সেই দৃশ্যটি তারা ভিডিও করেনি। তিনি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগও করেননি। তিনি আমার আত্মীয়। কিন্তু কে বা কারা ভিডিওটি ভাইরাল করেছে, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
এ বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। কোনোভাবেই তাদের অসম্মান করা উচিত নয়। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে দেবিদ্বার উপজেলা মুক্তিযুদ্ধ সংসদের আহ্বায়ক আব্দুর রবকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আরিফ আজগর/এআরবি