হাদির মৃত্যুতে উত্তাল সারাদেশ, বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে সারাদেশে শোক ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। রাজধানী থেকে জেলা-উপজেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে মহাসড়ক- সবখানেই নেমেছে ছাত্র-জনতা। মধ্যরাত পর্যন্ত চলেছে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ। একের পর এক স্লোগানে প্রকম্পিত হয়েছে দেশ।
গত ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হাদি। তার মৃত্যুর খবরে মুহূর্তেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের আগুন। খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্র, যুব ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
হাদির মৃত্যুর খবরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাতে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। নারী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে রাত ১টার দিকে হল থেকে বের হয় বিক্ষোভ মিছিল, যা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে রাত ১১টায় শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন। তারা হাদির হত্যাকে পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেন।
বগুড়া
বগুড়ায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রাত ১২টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, হাদি কোনো ব্যক্তি নন তিনি প্রতিবাদের প্রতীক। বিচার নিশ্চিত না হলে রাজপথ আরও উত্তাল হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তারা।
ফরিদপুর
হাদির মৃত্যুর খবরে গভীর রাতে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ছাত্র-জনতা। স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা, একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা স্থান ত্যাগ করেন।
বক্তারা বলেন, জুলাই আন্দোলনে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শুক্রবার পুনরায় ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণাও দেওয়া হয়।
সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় মধ্যরাতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।
বক্তারা দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান। পরিস্থিতি ঘিরে শহরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)
জাবিতে শোক ও প্রতিবাদ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা ফ্যাসিবাদ উৎখাতের শপথ নেন। রাত ১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, এক হাদিকে হত্যা করে আন্দোলন থামানো যাবে না। তার শাহাদাত নতুন করে প্রতিরোধের শক্তি জোগাবে।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জে শহীদি মসজিদ থেকে মিছিল বের হয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা হাদির মৃত্যুকে চলমান আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)
চবিতে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। রাত সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়।
নেতারা বলেন, পরিকল্পিতভাবে হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।
শেরপুর
শেরপুরে জেলা নাগরিক পার্টির নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিউমার্কেট মোড়ে সমাবেশ হয়।
বক্তারা বলেন, হাদির খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না তারা।
জয়পুরহাট
জয়পুরহাটে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে মিছিল ও সমাবেশ হয়। শহরের প্রধান সড়কে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।
বক্তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, বিচারহীনতা চলতে দেওয়া হবে না।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)
নোবিপ্রবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। হল ও ক্যাম্পাস সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে সমাবেশ হয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে।
জামালপুর
জামালপুরে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিতে শহর উত্তাল হয়ে ওঠে।
আন্দোলনকারীরা বলেন, হাদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে একমাত্র কণ্ঠ ছিলেন, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাত সাড়ে ১১টার পর বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশে মিলিত হন বিক্ষোভকারীরা।
তারা দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
ফেনী
ফেনীতে শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ট্রাংক রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, হাদির দেখানো পথেই আন্দোলন চলবে, বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না।
সাভার
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন ছাত্র-জনতা। এতে যান চলাচল ব্যাহত হয়।
আন্দোলনকারীরা বলেন, দ্রুত বিচার না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ভোলা
ভোলায় খেলাফত মজলিসের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। শহরের প্রধান সড়কে স্লোগানে মুখরিত হয় এলাকা।
বক্তারা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
পিরোজপুর
পিরোজপুরে সর্বদলীয় অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।
নেতারা বলেন, প্রশাসন ব্যর্থ হলে জনগণই বিচার আদায় করবে।
কক্সবাজার
কক্সবাজারে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পর্যটন নগরী। বিভিন্ন সংগঠনের জুলাই যোদ্ধারা এতে অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, হাদির রক্ত নতুন করে আন্দোলনের আগুন জ্বালিয়েছে।
নরসিংদী
উসমান হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে নরসিংদীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষা চত্বর থেকে মিছিল শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নরসিংদী বাজারে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মোসলেহ উদ্দিন ম্যুরালের নৌকার প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়। পরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানান এবং ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
কুষ্টিয়া
হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে কুষ্টিয়ায় সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বড়বাজার থেকে মিছিল শুরু হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার সামনে অবস্থান নেয়। পরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের সংযোগস্থল মজমপুর গেটে রেলগেট ফেলে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এতে দুই দিকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। বিক্ষোভকারীরা দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বরগুনা
হাদির হত্যার বিচার ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে প্রেসক্লাব এলাকা থেকে মিছিল শুরু হয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। বক্তারা হাদি হত্যার মূল আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও প্রশাসনের জবাবদিহি দাবি করেন।
গাইবান্ধা
হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে গাইবান্ধা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও শোক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে সড়ক অবরোধ করে। টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে স্লোগান দিলে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১২টার পর বিক্ষোভকারীরা সড়ক ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিক্ষোভে হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
দাফন প্রসঙ্গ
হাদির ইচ্ছা ছিল পিতার পাশে দাফন হওয়ার। তবে জাতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিত্ব হওয়ায় দাফনস্থল নিয়ে পরিবার ও সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে।
পরিবার জানিয়েছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে দাফনের স্থান ও সময় জানানো হবে।
এআরবি
