হাদির খুনিদের গ্রেপ্তার দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ, লাঙ্গল প্রতীক ভাঙচুর

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী জুলাই বিপ্লবী শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাধারণ ছাত্র-জনতার মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সারা দেশের মতো রংপুরেও হাদির হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে জুলাই আন্দোলনকারী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ১১টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এতে জুলাই আন্দোলনকারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিচার বিচার বিচার চাই, হাদি হত্যার বিচার চাই, আর নয় প্রতিরোধ, এবার হবে প্রতিশোধ, দিল্লি যাদের মামা বাড়ি, বাংলা ছাড়ো তাড়াতাড়ি, পেতে চাইলে মুক্তি ছাড়ো ভারত ভক্তি, সুশীলতার দিন শেষ, বিচার চাই বাংলাদেশ, তুমি কে আমি কে? হাদি হাদি, ‘ভারতের আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ, লাল জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার, আমরা সবাই হাদি হব, গুলির মুখে কথা কবসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিলটি পার্কের মোড়, শহীদ আবু সাঈদ চত্বর, মডার্ন মোড় ও লালবাগ, কলেজ রোড হয়ে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চ ও জুলাই আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বেরোবি শিক্ষার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক জাহিদ হাসান জয় বলেন, আমরা যুগে যুগে দেখেছি ফ্যাসিবাদী ও জঙ্গিবাদীরা বিপ্লবীদের গোপনে হত্যা করে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যারা ফ্যাসিবাদ, জুলুমবাজি ও কালচারাল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, সন্ত্রাসীরা তাদের হত্যার নীলনকশা এঁকেছে। হাদিকেও সেভাবেই হত্যা করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের পর অনেক জুলাইযোদ্ধা নৈতিকতা বিসর্জন দিলেও আমাদের নেতা হাদি তার নৈতিকতার সর্বোচ্চ অবস্থান ধরে রেখেছেন। তিনি দেশের মাটি, মানুষ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের রাজনীতির পক্ষে ভারতীয় আগ্রাসন রুখতে নতুন বন্দোবস্তের স্বপ্নের সারথি হয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুলাইযোদ্ধা রহমত আলী বলেন, জুলাই আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে যারা কাজ করেছে, তাদের মধ্যে শরীফ ওসমান হাদি অন্যতম। মধ্যযুগীয় কায়দায় মাথায় গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ক্ষতি হয়তো বাংলাদেশ আর কখনো পূরণ করতে পারবে না। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যারা কাজ করবেন, তাদের পেছনে অন্যতম অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন ওসমান হাদি। তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধ ফ্যাসিবাদের রানি খুনি হাসিনা মেনে নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ও ভারতের যৌথ পরিকল্পনায় হাদি ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সরকার যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে না পারে, তাহলে তারা মসনদে বসে থাকার নৈতিক অধিকার হারাবে।
কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমরা ভারতের কোনো আগ্রাসন মেনে নেব না। আমাদের হাদি ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যাকারীরা আবার ভারতে গিয়ে অবস্থান নিয়েছে। এটি ভারতের ষড়যন্ত্রের প্রতিফলন। ভারত যদি আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র হয়ে থাকে, তাহলে সন্ত্রাসী খুনিরা কেন সেখানে নিরাপদ আশ্রয় পাবে? ভারত সরকারের উচিত হাদির হত্যাকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া। হাদি বিপ্লবের প্রতীক, সাহসের বাতিঘর।
প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে শাপলা চত্বর থেকে ফেরার পথে নগরীর খামার এলাকার মেয়র মোড়ে লাঙ্গল প্রতীক ভাঙচুর করে।
এদিকে, হাদির মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে রাত ১২টার দিকে নগরীর সেন্ট্রাল রোডে জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে জাতীয় ছাত্রসমাজ মহানগর কমিটির উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পায়রা চত্বর ও জাহাজ কোম্পানি মোড় হয়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় জাতীয় ছাত্রসমাজ রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন জসিম, সহ-সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জেপলিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল বিলাসসহ মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে কাউনিয়া উপজেলার বেইলি ব্রিজ এলাকায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর মতিঝিলে নির্বাচনী প্রচারণা শেষে ফেরার পথে পল্টন বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুষ্কৃতকারীরা ওসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত সোমবার তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সেখানে দীর্ঘ লড়াই শেষে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, শরীফ ওসমান হাদির স্মরণে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটায় রংপুরের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা শোক র্যালি ও গায়েবানা জানাজার আয়োজন করবে। র্যালিটি টাউন হল চত্বর থেকে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বর পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করবে। এর আগে, আজ বাদ জুমা সর্বদলীয় ছাত্র-জনতার ব্যানারে রংপুর মডেল মসজিদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এআরবি