‘দুই মেয়েরে বাঁচাতে পারলেও ছোটটারে পাইনি, ও জ্বলে গেছে ঘটনাস্থলেই’

‘ঘরের দুই দরজায় দুইটা তালা মারি দি আগুন লাগাই দিছে। আমি বাহির অনের (হওয়ার) সময় বউ, বাচ্চা (দুই ছেলে) নিয়ে বাহির হইছি। তিনটা মেয়ে অন্য রুমে শোয়। দুইজন একপাশে যায় আশ্রয় নিয়েছে, তাদের বাহির কইরতে পাইরছি। এর ৫ মিনিটের মধ্যে পুরো ঘর জ্বলি ছাই। তাদের একজনের শরীরের এক তৃতীয়াংশ ও আরেকজনের অর্ধেক পোড়া গেছে। ছোটটারে (আয়েশা আক্তার) পাইনি, ও জ্বলে গেছে ঘটনাস্থলেই।’
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে আগুনের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন লক্ষ্মীপুর ১০০ শয্যা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এসব কথা বলেন।
এদিকে ঘটনাস্থিলেই মেয়েকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নাজমা আক্তার। তিনি সাংবাদিকদের কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বেড়ার লগে (পাশে) হিঁড়ার (ঘরের ভিটা) এক হাত হরাক (দূরত্ব) হানি (পানি) না পেট্রোল ঢালি (ঢেলে) দিছে, হিয়ানে (সেখানে) আগুন জ্বইলতে জ্বইলতে দুয়ারের (দরজা) দিকে উডি (উঠে) গেছে। দুয়ারে উডি যাই রুমসহ সব জ্বলি গেছে ফা ফা করি। বিদ্যুতের কাটাউট খুলি আই (এসে) দেহি সব জ্বলে গেছে, আর কিছু নাই। আমার কলিজার টুকরা আয়েশাও জ্বলে গেছে।’
লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রণজিত কুমার সাহা বলেন, আমাদের কমলনগর উপজেলা ইউনিট আগুন নিভিয়েছেন। দরজায় তালা ও পেট্রোল লাগিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমরা এখনো নিশ্চিত নয়। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, ঘটনাটি তদন্ত চলছে। এখনো মামলা হয়নি। কে বা কারা আগুন লাগিয়েছে বা আগুন লেগেছে তা উদ্ঘাটনে আমরা কাজ করছি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) গভীর রাতে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেলালের ঘরে দুর্বৃত্তদের আগুনে তার মেয়ে আয়েশা আক্তার (৮) মারা যায়। এছাড়া বেলালসহ তার দুই মেয়ে স্মৃতি আক্তার (১৭) ও বিথি আক্তার (১৪) দগ্ধ হয়। বেলাল সদর হাসপাতালে এবং তার দুই মেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর