নৌবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ

খুলনায় নৌবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে তারা মিয়া (৬২) নামে এক প্রতারককে আটক করা হয়েছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে নগরীর সঙ্গীতা হলের সামনে থেকে তাকে আটক করে নৌবাহিনীর সদস্যরা। পরে তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিস্ব হয়েছেন রাজশাহীর নওগা জেলার মো. রাজু ও মো. ফারুখ হোসেনের পরিবার। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা। এরমধ্যে রাজুর কাছ থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ফারুখ হোসেনের কাছ থেকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক।
আটক তরিকুল ইসলাম খুলনা নগরীর খালিশপুর গোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দা মোকাম মোল্লার ছেলে। সে নিজেকে কখনও নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য আবার কখনও পুলিশের সাবেক সদস্য হিসেবে পরিচয় দিত।
প্রতারণার শিকার হওয়া মো. রাজু বলেন, নৌবাহিনীর সদস্য পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ছেলে মো. রাকিবকে নিয়ে খুলনায় আসি। এরপর শফিক নামে এক দালালের সঙ্গে পরিচয় হয়। ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দিতে তার সঙ্গে ৮ লাখ টাকা চুক্তি হয়। শফিক তারা মিয়া নামে নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তার সঙ্গে আমাকে মোবাইলে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা মিয়া আমার ছেলেকে নৌবাহিনীতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে মোবাইলের মাধ্যমে তাকে প্রথমে ২০ হাজার এবং একই দিন দুপুরে আরও ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরের দিন রাতে প্রতারক তারা মিয়া প্রত্যায়নপত্র দিলে তারা বাড়িতে চলে যান।
তিনি জানান, প্রতারক তারা মিয়া ফোন দিয়ে দালাল শফিকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ এবং তাকে কত টাকা দিয়েছেন তা ফেরত নেওয়ার জন্য তাদের চাপ দিতে বলে। পরে তাদের জানানো হয় নৌবাহিনীতে নিয়োগের জন্য তাকে আরও ৩ লাখ টাকা প্রদানের কথা। নৌবাহিনীতে নিয়োগপত্র নেওয়ার জন্য তারা বাড়ির গরু, ছাগল এবং এনজিও থেকে ঋণ করে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা প্রতারক তারা মিয়াকে দেন। তারা মিয়া তাকে একটি নীল কাগজ এবং নিয়োগপত্র ধরিয়ে দিয়ে কাউকে বিষয়টি না জানানোর জন্য বলে। ২৬ নভেম্বর রক্ত পরীক্ষার কথা বলে আরও ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়। সবমিলিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার কাছ ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে তারা বিভিন্নস্থানে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে নিয়োগপত্র এবং কাগজ দেওয়া হয়েছে তার সবই ভুয়া।
অপর ভুক্তভোগী মো. ফারুখ হোসেন বলেন, এক মামার মাধ্যমে তারা মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় হয়। মোবাইলে কথা বলার একপর্যায়ে ৮ লাখ টাকায় চাকরির চুক্তি হয়। নিয়োগপত্র দিয়ে আমার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছে। রক্ত পরীক্ষার কথা বলে আরও সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছে। তবে রক্ত পরীক্ষা করেনি। ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার কথা জানালে আমরা শনিবার খুলনায় আসি। খুলনায় এসে নৌবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা মিয়ার বর্ণিত ঠিকানা সঙ্গীতা সিনেমা হলের সামনে চলে আসি। পরে নৌবাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। চাকরি দেওয়ার কথা বলে সে আমার কাছ থেকে মোট ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সোনাডঙ্গা থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত অনিমেষ মন্ডল বলেন, নৌবাহিনীর সদস্যরা দুপুরে এক প্রতারককে আটক করে আমাদের কাছে সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মোহাম্মদ মিলন/এএমকে