৪ বছর ধরে বন্ধ মূল সেতুর নির্মাণ কাজ, বিকল্প সাঁকোটিও চলাচলের অনুপযোগী

যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার মধ্যে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম টেকা নদীর ওপর নির্মিত কাঠের সাঁকোটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে দুই উপজেলার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। গত এক সপ্তাহ আগে সাঁকোটি সম্পূর্ণভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভোগান্তি লাঘবে অভয়নগর উপজেলা প্রশাসন কাঠের সাঁকোটি মেরামতের কাজ শুরু করেছে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল।
২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে টেকা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেতুর প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হওয়ার পর আইনি জটিলতার কারণে ৪ বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় উপায় না পেয়ে অনেকেই নৌকায় করে নদী পার হচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মোটরসাইকেল আরোহীরা ফিরে যাচ্ছেন। আবার অনেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের মানুষ নওয়াপাড়া-মনিরামপুর ভায়া টেকা সাঁকো হয়ে চলাচল করেন। পাশাপাশি রাস্তাটি আড়াআড়ি হওয়ায় যাতায়াতে সময় বাঁচাতে যশোরের কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া ও পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরা জেলার মানুষও এ পথ ব্যবহার করেন।
এছাড়া অভয়নগরের বারান্দি ও দিঘলিয়া গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী মনিরামপুর উপজেলার টেকারঘাট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বর্তমানে তারা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। এমনকি অসুস্থ রোগীদেরও হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল দুই পাড়ের হাটবাজারে নিতে সমস্যায় পড়েছেন। ফলে অভয়নগর অংশে নদীর পাড়ে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে তারা কেনাবেচা করছেন।
সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর পর দুই উপজেলার মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে নির্মাণাধীন সেতুর পাশে চলাচলের জন্য একটি বিকল্প কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে বিকল্প সাঁকোটি দীর্ঘদিন ধরে নড়বড়ে অবস্থায় ছিল।
ভ্যানচালক আব্দুর রহিম জানান, এই সড়কে কাঠের সাঁকোদিয়ে ভ্যান চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। সাঁকোটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে অন্য এলাকায় গিয়ে ভ্যান চালাতে হচ্ছে।
বারান্দি গ্রামের শেখ রাজু আহম্মেদ বলেন, এই সাঁকোটি ছিল দুই উপজেলার ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। এখন কেউই স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। এলাকার মানুষ বিকল্প হিসেবে নৌকায় নদী পার হচ্ছে।
মনিরামপুর উপজেলার পাচাকড়ি গ্রামের মধু রায় জানান, অসুস্থ স্ত্রীকে অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে গিয়ে তিনি চরম ভোগান্তির শিকার হন। পরে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিতে হয়।
পায়রা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, একমাত্র সংযোগ সাঁকোটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় কর্মজীবী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা ভাঙা সাঁকোটির ওপর দিয়ে পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়ছেন।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালাউদ্দিন দিপু জানান, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সাঁকো সংস্কারের জন্য প্রকল্প থেকে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
রেজওয়ান বাপ্পী/এআরবি