কক্সবাজার সৈকতে রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো স্থায়ী ও ক্ষতিকারক অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এছাড়াও সৈকতে জেলা প্রশাসনের দেওয়া একটি নির্দেশিকা বোর্ডে লেখা আছে, ' সৈকতের বালিয়াড়িতে কোন ধরণের ভ্রাম্যমান দোকান ও স্থাপনা বসানো সম্পূর্ণ নিষেধ, আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ৮ টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা যায়, বালিয়াড়িতে বিমানের বিশাল আকৃতির একটি অস্থায়ী স্থাপনার নির্মাণযজ্ঞ চলছে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ ফুট এবং প্রস্থে ১৫ ফুট।
নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও কীভাবে বালিয়াড়ির বুকে এমন কাজ চলছে—উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রতিবেদকের হাতে আসে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের ম্যাজিস্ট্রেট (সহকারী কমিশনার) আজিম খান স্বাক্ষরিত একটি অনুমতি পত্র।
পত্র অনুযায়ী, গত ১৭ ডিসেম্বর ব্র্যান্ড সলিউশন লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২১ ডিসেম্বর থেকে ০১ জানুয়ারি পর্যন্ত সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর পার্শ্বে অনুষ্ঠান পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়।
পত্রে ‘অনুষ্ঠান পরিচালনা/পয়েন্ট’ নামে একটি কলামের ২নং ক্রমিকে লেখা হয়েছে ক্ষুদ্র আকারে এলইডি প্রদর্শনী (৫ ফুট বাই ৬ ফুট), ১নং ক্রমিকে ফটোবুথ এবং ব্র্যাকেটে বিমান লেখা হলেও দৈর্ঘ্য বা প্রস্থ লেখা হয়নি।
এছাড়াও একই পত্রে উল্লেখিত ১৬ টি শর্তের মধ্যে ১নং শর্তে লেখা হয়েছে, “কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য্য বিনষ্ট হয় এরূপ কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে হবে।”
পরিবেশ সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন ঢাকাপোস্ট'কে বলেন, “ইসিএ এলাকা অত্যন্ত স্পর্শকাতর, সৈকতের বালিয়াড়িতে অস্থায়ী বা স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞাও আছে। এমন অবস্থায় কি করে সেটি হলো তা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত।' অনুমতিপত্রের ৮ নং শর্তে বলা হয়েছে, 'জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি করে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।”
সৈকতে ঘুরতে আসা মোস্তফা নামে এক পর্যটক বলেন, “এমনিতেই সৈকতে মানুষের ভীড়, তার উপর একদম বিচের মাঝখানেই বিমানের মত কি একটা বানানো হচ্ছে। সৈকত উন্মুক্ত হওয়া উচিত। এই দৃশ্য বিব্রতকর।”
নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইরশাদুল হক মুঠোফোনে বলেন, “এক্টিভেশন বা প্রচারণার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছে, বাকিটা অপারেশন ম্যানেজার রিপন বিশ্বাস বলতে পারবে।” রিপন বিশ্বাসের সাথে এবিষয়ে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন নাম্বার চাওয়া হলে “ঠিক আছে আমি দেখছি”- বলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি 'বিষয়টির খোঁজ নিয়ে' দেখবেন বলে জানান।
বারবার ফোন করা হলেও অনুমতি প্রদান করা পর্যটন ম্যাজিস্ট্রেট আজিম খান কল ধরেননি।
ইফতিয়াজ নুর নিশান/এসএমডব্লিউ