৫৪ ঘণ্টা পর মিলল শামছুদ্দিনের মরদেহ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জাগলার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র সংঘর্ষে পাঁচজন নিহতের ঘটনার ৫৪ ঘণ্টা পর নিখোঁজ শামছুদ্দিনের মরদেহ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় উপজেলার জাগলার চর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পরিবার।
শামছুদ্দিন হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং মৃত ছায়দুল হকের ছেলে। তার ছোট ছেলে মোবারক হোসেন শিহাব একই দিনের সংঘর্ষে নিহত হয়। এ ঘটনায় শামছুদ্দিনের ভাই আবুল বাশার ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে হাতিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বাদী আবুল বাশার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাতিজার ময়নাতদন্ত ও দাফনকাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হওয়ায় মামলা করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আমরা অর্ধেক এজাহার লিখে মরদেহ দাফন করেছি, তারপর দাফন শেষে এসে পুরোটা লিখেছি। আজ আবার আমার ভাইয়ের মরদেহ পাওয়া গেছে। ছেলের কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে। আমরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
শামছুদ্দিনের স্ত্রী মাহফুজা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বলেছিলাম আমার স্বামীর লাশ সেই চরে আছে। আজ আত্মীয়দের পাঠিয়ে সেই লাশ পাওয়া গেছে। আমার স্বামীকে চরে জমি দেওয়ার কথা বলে মনির মেম্বারসহ কয়েকজন ডেকে নিয়ে যায়। সেখানেই আমার ছেলে ও আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমরা এমন হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
শামছুদ্দিনের ছেলে মো. ফখরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৫৪ ঘণ্টা পর আমার বাবার মরদেহ পাওয়া গেছে। আমরা ধারণা করছি, ওই বাগানের ভেতরে আরও মরদেহ থাকতে পারে। জমি নিয়ে সেখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে পুলিশ ক্যাম্প করা প্রয়োজন। এই চর নিয়ে রক্ত ঝরলেও আসামিরা এখনো পলাতক। আমরা তাদের বিচার চাই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডসংলগ্ন জাগলার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। এ সময় গোলাগুলিতে পাঁচজন নিহত হন এবং অন্তত ৮ থেকে ১০ জন আহত হন।
নিহতরা হলেন- হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শামছুদ্দিনের ছেলে মো. মোবারক হোসেন শিহাব, সুখচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর আমান উল্যাহ গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন, হাতিয়া পৌরসভার ০৫ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম লক্ষিদিয়ার মৃত শাহী আলমের ছেলে হক সাব, মো. কামাল উদ্দিন এবং সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ চর মজিদ এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আবুল কাশেম।
স্থানীয়দের দাবি, জাগলার চরের জমি এখনো সরকারিভাবে কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত ৫ আগস্টের পর জাহাজমারা ইউনিয়নের কোপা সামছু বাহিনী প্রতি দাগ ২০ হাজার ৫০০ টাকায় জমি বিক্রি শুরু করে। পরে সুখচর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনী ওই জমির দখল নিতে মরিয়া হয়ে আরও বেশি দামে জমি বিক্রি শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। এর জেরেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম ঢাকা পোস্টকে মরদেহ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ সদস্য রয়েছে। নতুন জেগে ওঠা চরগুলো নিয়ে সবার নজরদারি প্রয়োজন। হাতিয়া অনেক বড় উপজেলা হলেও এখানে মাত্র একটি থানা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
হাসিব আল আমিন/এআরবি