ঝালকাঠিতে হাদী ইস্যুতে জামায়াত-এনসিপি-বৈছাআ সব ইসলামি দল এক মঞ্চে

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা, ইনকিলাব মঞ্চ–কালচারাল সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও ঝালকাঠির কৃতি সন্তান শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদীর রূহের মাগফিরাত কামনা এবং হত্যার বিচার দাবিতে ঝালকাঠিতে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঝালকাঠির কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ‘আমরা ঝালকাঠিবাসী’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জেলা ইমাম সমিতিসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী আন্দোলনের সকল সংসদ সদস্য প্রার্থী এবং নেতারা একই মঞ্চে উপস্থিত হয়ে শহীদ ওসমান হাদীর হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন।
বক্তারা বলেন, শহীদ ওসমান হাদী কোনো দলীয় গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ইনসাফ ও সততার পক্ষে এক নির্ভীক কণ্ঠ। আধিপত্যবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাই ছিল তাঁর রাজনীতি। সেই রাজনীতিকে সাংগঠনিক রূপ দিতেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইনকিলাব মঞ্চ, যেখানে রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে ন্যায়ভিত্তিক বয়ান গড়ে তোলার চেষ্টা চলত। আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও কালচারাল ফ্যাসিজমের মোকাবেলায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার, যেখান থেকে নিয়মিতভাবে ভারতীয় আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ উদ্বেলিত হতো।
জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা আব্দুল হাই নিজামীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও ঝালকাঠি জেলা আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সভাপতি হাফেজ মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, জামায়াত মনোনীত ঝালকাঠি-১ ও ঝালকাঠি-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ড. ফয়জুল হক ও শেখ নেয়ামুল করিম, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী ও মাওলানা ইব্রাহিম আল হাদী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জেলা আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম মান্না, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সদস্য সচিব রাইয়ান বিন কামালসহ বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এনসিপি ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম মান্না বলেন, “শহীদ ওসমান হাদী কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সম্পদ ছিলেন না—তিনি ছিলেন পুরো জাতির এক মেসেঞ্জার। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়, ইনসাফ ও সততার রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় তিনি কথা বলে গেছেন দৃঢ়তার সঙ্গে। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আজ আমরা যে প্রশ্ন তুলছি—হত্যাকারীরা কোথায়, কেন তারা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে—এই প্রশ্ন শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। রাষ্ট্র যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মানুষের আস্থা ভেঙে পড়ে। আমরা প্রতিশোধ চাই না, আমরা চাই আইনের শাসন।”
ঝালকাঠি-২ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী শেখ নেয়ামুল করিম বলেন, “এক শুক্রবার হাদী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আরেক শুক্রবার রাতে আমরা তাকে হারিয়েছি, আরেক শুক্রবার রাতে তার জন্য এই দোয়া মাহফিল করছি। আমরা হয়তো তাকে ঠিকমতো চিনতে পারিনি, কিন্তু আধিপত্যবাদী শক্তি চিনতে পেরেছিল—এই কারণেই পরিকল্পিতভাবে তাকে টার্গেট করা হয়েছে।”
শেখ নেয়ামুল করিম অভিযোগ করে বলেন, “লাখো মানুষের জানাজা প্রমাণ করেছে—এই জাতি হাদীকে কতটা ভালোবেসেছে। অথচ এতদিনেও হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। কিসের ভয়, কিসের চাপ—এই প্রশ্নের উত্তর জাতি জানতে চায়।”
ঝালকাঠি-১ আসনের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. ফয়জুল হক বলেন, “আজ এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ইসলামী সংগঠন এক মঞ্চে দাঁড়িয়েছে—এটাই প্রমাণ করে, হাদীর আদর্শ আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে হত্যার এতদিন পরও তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
সভা থেকে বক্তারা অবিলম্বে শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদী হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে তারা হাদীর দেখানো পথে ইনসাফ, সততা ও সার্বভৌমত্বের রাজনীতি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
শেষে শহীদ ওসমান বিন হাদীর রূহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
মো. শাহীন আলম/এসএমডব্লিউ