হাতিয়ায় ৬ জন নিহতের ঘটনায় আরেক মামলা, এনসিপির নেতাসহ আসামি ২১

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে সংঘর্ষে ৬ জন নিহতের ঘটনায় আরেকটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এতে এনসিপির নেতাসহ ২১ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলায় এনসিপির নেতারা হলেন- হাতিয়া উপজেলার ছাত্র শক্তির আহ্বায়ক নেয়ামত উল্যাহ নীরব, সুখচর ইউনিয়ন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হাফেজ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। তারা সবাই জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের অনুসারী।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম ঢাকা পোস্টকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
নিহত সুখচর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের চর আমান উল্যাহ গ্রামের আলাউদ্দিনের বাবা মহিউদ্দিন এ মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে নিহত শামছুদ্দিনের ভাই আবুল বাশার বাদী হয়ে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের শামছুদ্দিনের ছেলে মো. মোবারক হোসেন শিহাব, সুখচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর আমান উল্যাহ গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন, হাতিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের পশ্চিম লক্ষ্মীদিয়া মৃত শাহী আলমের ছেলে হক সাব, মো. কামাল উদ্দিন, সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ চর মজিদ এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আবুল কাশেম, আবুল বাশার ভাই শামছুদ্দিন।
এদিকে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে নোয়াখালীর মাইজদী মামলার আসামি এনসিপির শীর্ষ দুই নেতাসহ ও ছাত্রশক্তির ৭ নেতাকর্মী অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, হাতিয়া উপজেলার ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক নেয়ামত উল্যাহ নীরব, সুখচর ইউনিয়ন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হাফেজ মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, হরণি ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আকতার উদ্দিনসহ জাগলার চরে সংঘর্ষের নিহত আলাউদ্দিনের বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তান আদালতে মামলা করার জন্য মাইজদীর উদ্দেশ্যে আসছিলেন। তাদের মধ্যে ৩/৪ জন হত্যার ঘটনায় হাতিয়া থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তারা মাইজদীর কাছাকাছি পৌঁছালে সাদা পোশাকে পুলিশ পরিচয়ে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা পুলিশ, ডিবি, র্যাবসহ সব জায়গায় যোগাযোগ করি। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। আমরা আশঙ্কা করছি, কোনো দস্যু বাহিনীর লোকজন তাদের তুলে নিয়ে গেছে কিনা।
সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন ও র্যাব-১১ সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের কারও কাছেই তথ্য নেই বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাতিয়ার এক সাবেক চেয়ারম্যান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত শামছুদ্দিনের মরদেহ নিয়ে মামলা বাণিজ্য হয়েছে। তাই পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে টিপসই নিয়ে মহিউদ্দিনের নামে মামলাটা করেছে পুলিশ। এটা হাতিয়ার রাজনীতির জন্য দুঃখজনক ঘটনা।
এদিকে মামলার আসামি হাতিয়া উপজেলার ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক নেয়ামত উল্যাহ নীরব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মামলার আসামি করা হয়েছে। আমি আজ অনেকদিন এলাকায় নাই। যারা এমন কাজ করেছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।
মামলার বাদী মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেঘনা নদীর জাগলার চর দখলকে কেন্দ্র করে পূর্ববিরোধের জেরে ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে হাতিয়ার জাগলার চরে সামছুদ্দিন গ্রুপের সশস্ত্র হামলায় আমার ছেলে মো. আলাউদ্দিন গুলিবিদ্ধ ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন। পরে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নির্দিষ্ট আসামিসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে আমি হাতিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছি।
হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাগলার চরে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রথম মারা যান আলাউদ্দিন। তার পরিবারের সঙ্গে আমাদের শুরু থেকে যোগাযোগ ছিল। আলাউদ্দিনের বাবা মহিউদ্দিন হাতিয়া থানায় এসে মামলাটি করেছে। এ ঘটনায় পুলিশের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। যারা পুলিশকে জড়িয়ে কথা বলছেন সেসব কথা সঠিক নয়।
হাসিব আল আমিন/আরকে