জামায়াতের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ালেন সাংবাদিক নোমান

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের মনোনীত প্রার্থী এবং দৈনিক আমার দেশ-এর আবাসিক সম্পাদক অলিউল্লাহ নোমান তার প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ তথ্য জানান।
ঢাকা পোস্টের পাঠকদের জন্য ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, ভালোবাসার ঋণ শোধ করা যায় না। শুরুতেই আমি আন্তরিকভাবে সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্তটি ছিল হঠাৎ, ধূমকেতুর মতো। মনোনয়ন দাখিলের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে বিরত হয়ে যাওয়াটাও অনেকটা কাকতালীয়। মূলত হঠাৎ করেই আমিরে জামায়াতের একটি ফোন আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। জোট রক্ষার বৃহত্তর স্বার্থে দলীয় সিদ্ধান্তেই মনোনয়ন দাখিল করা থেকে বিরত থাকতে হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে অনেকেই মনে কষ্ট পেয়েছেন। বিশেষ করে যারা দিনরাত আমার সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন, তাদের কষ্টটা অনেক বেশি। বেশ কয়েকজন ফোন করে কেঁদেছেন। যারা আমাকে ভালোবেসে অনেক ঝুঁকি জেনেও সমর্থন জানিয়েছেন, তারাও কষ্ট পেয়েছেন। যারা আমাকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাদের মনোবেদনাও আমি বুঝি।
এলাকার মানুষের প্রতি আমার ভালোবাসার টান ছিল জীবনের শুরু থেকেই। ঢাকায় যখন ছাত্রজীবন কাটিয়েছি, তখনও এলাকার ছাত্রছাত্রীদের নানা সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতাম। এছাড়া কারও কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে যেতাম। জীবনে কখনো চাওয়া-পাওয়ার হিসাব আমার ছিল না, এখনও নেই। হঠাৎ করেই নির্বাচনের সিদ্ধান্তটি ছিল মানুষের প্রতি ভালোবাসা, জুলাই অভ্যুত্থানে তরুণদের প্রত্যাশা এবং ইনসাফভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সরাসরি ভূমিকা রাখার চেষ্টা। যত কথাই বলা হোক না কেন, সঠিক জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে পারলে তা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে খায়রিহি ওয়া শাররিহি মিনাল্লাহি তায়ালা।
নেতা না হয়ে খাদেম হওয়ার এক অদম্য ইচ্ছা ছিল। ব্রিটেনের পরিচ্ছন্ন রাজনীতি দেখে যা শিখেছিলাম, তা কাজে লাগিয়ে একটি উদাহরণ তৈরি করার প্রতিজ্ঞা ছিল মনে মনে। আমার আচার-আচরণ ও ব্যবহারে অল্প সময়ের মধ্যেই তা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। একেবারে ময়লা হাত দেখেও কারও সঙ্গে করমর্দন করা থেকে বিরত থাকিনি।
চার সপ্তাহের এই অভিযানে অন্তত এক লাখ মানুষের সঙ্গে করমর্দন করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষের কাছে গিয়ে তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা শোনার চেষ্টা করেছি। খুবই ইচ্ছে ছিল মানুষের অধিকারগুলো নিয়ে তাদের কাছে ফিরে যাব। কাউকে যেন আমার কাছে এসে তাদের সমস্যার কথা বলতে না হয় সমস্যা শুনতে তাদের কাছেই আমি যাব, এটিই ছিল আমার রাজনীতির প্রথম চিন্তা।
তবে আল্লাহ পাক তাকদিরে কী রেখেছেন, তা আমি জানি না। আমি হতাশ নই। হয়তো আরও বড় কোনো জায়গা থেকে দেশ, জাতি ও এলাকার জন্য কাজ করার সুযোগ তৈরি হতে পারে এটিও আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
এটি আমার এক নতুন অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে এমন লোক আছেন, যাদের এক কাপ চা খাওয়াতে হয় না, এক টাকা খরচ দিতে হয় না, অথচ দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
আরও আশ্চর্যের বিষয়, প্রায় এক মাসব্যাপী টানা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জনসংযোগে আমার সঙ্গে প্রচুর লোক থাকতেন। কিন্তু আমি এক কাপ চায়ের বিলও জোর করে দিতে পারিনি। বহুবার চেষ্টা করেছি, কাজ হয়নি। চা, নাশতা কোনো কিছুর জন্য আমাকে খরচ করতে দেয়নি তারা। কখনো কারও মধ্যে ক্লান্তির চাপও দেখিনি। উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়েই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জনসংযোগ করেছেন।
আমার অল্প দিনের এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দিয়েছে। অল্প দিনের অভিজ্ঞতায় আমি বলতে পারি, বাংলাদেশ একদিন ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেই। আমরা জানতাম, নির্বাচনে টাকা ছাড়া কেউ কথা বলে না, টাকা ছাড়া কোনো কাজে লোক পাওয়া যায় না। ছোটবেলা থেকে এমনটাই শুনে এসেছি। কিন্তু নিজে মাঠে নেমে দেখলাম সময় বদলেছে। মাঠে নিঃস্বার্থ পরিশ্রমের জন্য কর্মী তৈরি হয়েছে, যাদের মধ্যে শতভাগ সততা ও কাজে আন্তরিকতা রয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবির এমন লোকবল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে এই প্রশংসা আমাকে করতেই হবে। এই দেশ পিছিয়ে থাকবে না। দুর্নীতিমুক্ত ও নিরলস কর্মীবাহিনী থাকলে দেশের পিছিয়ে থাকার কথা নয়। আপনারা যারা আমার সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন এবং সমর্থন জুগিয়েছেন, সবাই আমাকে ঋণী করেছেন। এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করা যাবে না।
আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। যেখানেই থাকি না কেন, আমার মন ও হৃদয় সব সময় থাকবে মাধবপুর-চুনারুঘাটের মানুষের মাঝে। এখন মোবাইলের যুগ। যখনই কোনো কাজে আমাকে প্রয়োজন মনে করবেন, সরাসরি ফোন দেবেন। আমি রিসিভ করতে না পারলেও পরে কলব্যাক করব, ইনশাআল্লাহ। সমস্যা শুনতে আপনাদের কাছেই যাওয়ার চেষ্টা করব। অল্প দিনের চলার পথে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের খারাপ ব্যবহার করে থাকলে বা আমার কোনো আচরণে মনে কষ্ট পেয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন।
সবশেষে দোয়া করি, বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদমুক্ত সার্বভৌম কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার মতো যোগ্য নেতৃত্বের হাতে যেন আল্লাহ দেশের দায়িত্ব দেন। আমরা এই মাতৃভূমিকে আর কোনো জালেম ও লুটেরা শাসকের হাতে দেখতে চাই না।
প্রসঙ্গত, হবিগঞ্জ-৪ আসন থেকে ১০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের নির্বাচনে অংশ নেবেন।
মাসুদ আহমদ রনি/এআরবি